সাংসদদের জন্য নতুন ফ্ল্যাট, ৪৭৭ কোটি টাকার প্রকল্পে 'গুজরাট সংযোগ'...
আজকাল | ৩০ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১১ আগস্ট নয়াদিল্লিতে সাংসদদের জন্য নির্মিত নতুন আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাবা কদক সিং মার্গে তৈরি হয়েছে চারটি টাওয়ার, প্রতিটি ২৫ তলা উঁচু। মোট ১৮৪টি ফ্ল্যাট সাংসদদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুট, সঙ্গে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও অফিস ব্যবহারের জায়গাও থাকছে। প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো জানায়, জমির অভাব মেটাতে এই বহুতল আবাসন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের খরচ নিয়ে সরকার মুখ খোলেনি।
পরে আরটিআইয়ের জবাবে নগরোন্নয়ন মন্ত্রক জানায়, নির্মাণে খরচ হয়েছে ৪৭৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকারও বেশি। হিসেব অনুযায়ী, প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ২.৫৯ কোটি টাকা। জমি সরকারের তরফে বিনামূল্যে দেওয়া হলেও, এত বড় অঙ্কে প্রকল্প সম্পূর্ণ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করেছে স্যাম ইন্ডিয়া এলএলপি নামে এক সংস্থা। কেন্দ্র ও দিল্লি সরকারের একাধিক বড় প্রকল্প ইতিমধ্যেই পেয়েছে তারা—দিল্লি মেট্রো, মুম্বই মেট্রো, পিএনবি ডেটা সেন্টার, ইসিজিসি ভবন ইত্যাদি। ২০০৭ সালে শুরু হওয়া এই সংস্থা বর্তমানে মদনলাল গর্গ ও তাঁর পরিবারের নিয়ন্ত্রণে।
গর্গ পরিবারের আরেকটি সংস্থা গর্গ রিয়েলটি গ্রুপ সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে তারা গুজরাটের ধোলেরা প্রকল্পে আগামী তিন বছরে ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। ধোলেরা বিশেষ বিনিয়োগ অঞ্চলকে কেন্দ্রীয় সরকার স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলছে, যা মোদীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের প্রকল্প। ইতিমধ্যেই গর্গ গ্রুপ সেখানে জমি কিনেছে এবং একাধিক আবাসন প্রকল্পও করেছে।
ফলে একদিকে দিল্লিতে সাংসদদের ফ্ল্যাট নির্মাণে এই সংস্থা বিপুল অঙ্কের সরকারি কাজ পেয়েছে, অন্যদিকে গুজরাটে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পে বড় বিনিয়োগ ঘোষণা করেছে—এতে রাজনৈতিক মহলে স্বাভাবিক ভাবেই নানা প্রশ্ন উঠছে। বিরোধীরা মনে করছে, এই ধরনের সংস্থাকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্প দেওয়ার পিছনে পক্ষপাতিত্ব থাকতে পারে। সরকারি জমি ব্যবহার, প্রকল্প বণ্টন এবং গুজরাট সংযোগ নিয়ে আগামী দিনে আরও বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে—একই সংস্থা একদিকে রাজধানীতে সাংসদদের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট তৈরি করছে, অন্যদিকে মোদীর গুজরাটে স্বপ্নের প্রকল্পে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ করছে—এতে কি কোনও রাজনৈতিক-কর্পোরেট যোগসাজশ নেই? বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, মোদী সরকারের সময়ে বারবার দেখা যাচ্ছে গুজরাটের সঙ্গে যুক্ত কিছু সংস্থা বিপুল সরকারি কাজ পাচ্ছে এবং পরে তারা আবার গুজরাটের বিভিন্ন প্রকল্পে বড় বিনিয়োগ করছে। এর ফলে সরকারপোষিত কর্পোরেটপন্থা এবং বন্ধু পুঁজিপতিদের সুবিধা করে দেওয়ার প্রবণতার অভিযোগ আরও জোরালো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারি প্রকল্প বণ্টন ও নীতি প্রণয়নে স্বচ্ছতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, সরকারি জমি বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে, খরচের হিসাব জনগণের সামনে শুরুতে প্রকাশ করা হয়নি, আর যে সংস্থা কাজ পেয়েছে, তারা পরোক্ষে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বপ্নপূরণের সঙ্গেও যুক্ত। এতে করে নেপথ্যে এক ধরনের কর্পোরেট-রাজনৈতিক সমঝোতা কাজ করছে বলেই ধারণা তৈরি হচ্ছে।
ধোলেরা প্রকল্পকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই হাজার হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন যখন সাংসদদের ফ্ল্যাট নির্মাণে একই গোষ্ঠীকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তখন বিরোধীরা একে ‘মোদী-কর্পোরেট যোগসাজশ’-এর নতুন নজির বলে দাবি করছে। অনেকের মতে, এর ফলে সরকারি সম্পদ ও করদাতার অর্থ ক্রমশ কর্পোরেট স্বার্থে ব্যবহার হচ্ছে, সাধারণ নাগরিকের জন্য নয়।