• ‘বৈশাখীকে ছাড়ব না’, হাই কোর্টে যাবেন শোভন, ‘আমিও সেখানেই যাব’, পালটা রত্নার
    প্রতিদিন | ৩০ আগস্ট ২০২৫
  • স্টাফ রিপোর্টার: ‘শোভন-রত্নার ম‌্যাচ’ আপাতত ড্র। আলিপুর আদালতের রায়ের জেরে একদিকে শোভন যেমন বিবাহবিচ্ছিন্ন হলেন না। অন‌্যদিকে আবার রত্নাও তাঁর স্বামীর সঙ্গে একত্রবাসের সুযোগ পেলেন না। তবে শোভনের আইনত স্ত্রী হিসাবেই রত্নার নামই থাকছে। উলটোদিকে প্রাক্তন মহানাগরিক শোভনের জীবনেও চলতি স্থিতাবস্থা বজায় রইল। তিনি যেমন ‘বান্ধবী’ বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গোলপার্কের বহুতল আবাসনে থাকেন, তেমনই থাকতে পারবেন। গোলপার্কের আবাসনে বৈশাখীর সঙ্গে যেখানে তিনি থাকছেন সেখানে যে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না তা এদিন রায়ের পরেও স্পষ্ট করেছেন শোভন। বলেছেন, ‘‘বৈশাখীর সঙ্গে যে সম্পর্কে ছিলাম, সেই সম্পর্কেই থাকব। বৈশাখীর আর আমার সম্পর্ক হল হৃদয়ের সম্পর্ক। আমরা একসঙ্গেই রয়েছি, একসঙ্গেই থাকব। এই সম্পর্কের উপরে কোনও আঘাত আমি আসতে দেব না।’’

    ২০১৭ সালে স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ‌্যায়ের বিরুদ্ধে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। রত্নার বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর আচরণ ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও তুলে আদালতে আবেদন জানান তিনি। শুনানিতে সওয়াল-পালটা সওয়ালের জেরে হাই কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছিল সেই মামলা। শোভনের হয়ে হাইকোর্টে শুনানির শেষ পর্বে সওয়াল করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পরে তা ফিরে আসে নিম্ন আদালতে। এদিন আলিপুর আদালতে আটবছর ধরে দীর্ঘ শুনানি শেষে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন খারিজ হওয়ায় উচ্চআদালতে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন শোভন।

    এদিনের রায়ের কপি হাতে না পেলেও রত্নার সঙ্গে তাঁর ‘সম্পর্ক’-এর যে ‘আইনগত বাধ্যবাধকতা’ রয়েছে, তা কাটাতে আইনজীবীদের সঙ্গে ইতিমধ্যে কথা বলেছেন। শোভনের কথায়, ‘‘যা পদক্ষেপ করতে হয়, অবশ্যই তা করব। যত দূর যেতে হয়, তত দূরই যাব। কোনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব রাখব না।’’ যদিও শোভনের এমন মন্তব‌্যর পালটা জবাব দিয়ে রত্না বলেছেন,‘‘আমার বিরুদ্ধে শোভনবাবু যে সমস্ত অভিযোগ এনেছিলেন তার একটাও প্রমাণ করতে পারেননি। অনেক বড় বড় আইনজীবী দাঁড় করিয়েছিলেন, কিন্তু সত‌্য, সত‌্যই। মিথ‌্যা দিয়ে তা ঢাকা যায় না। আমায় নিয়ে যা যা বলেছেন তার সবাই মিথ‌্যা প্রমাণ হয়েছে নিম্ন আদালতে।’’ এরপরই রত্নার কার্যত হুংকার,‘‘উনি যত দূর খুশি যান, আমিও যেতে প্রস্তুত আছি। একবার সুপ্রিম কোর্ট ঘুরিয়ে এনেছি, আবার যেখানে উনি মিথ‌্যা অভিযোগ নিয়ে যাবেন, আমিও আইনি পথেই সেখানেই যাব, সব মিথ‌্যার জবাব দেব।’’

    শোভনের আর্জি খারিজে আদালতের রায়কে নিজের জয় হিসাবেই দেখছেন বেহালা পূর্বের বিধায়ক রত্না। তাঁর এই জয়কে ব্যক্তিগত পরিসর থেকে সামাজিক বৃত্তে এনে ফেলেছেন রত্না। রায়ের পর কোর্টচত্বরে দাঁড়িয়ে রত্না বলেন, ‘‘আট বছর ধরে যে লড়াই করেছিলাম তার জয় হল। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মহিলাদের অনেক সময়েই ক্ষমতার কাছে হেরে যেতে হয়। আমি সব নারীর হয়ে সেই জয় পেয়েছি। এই রায় মহিলাদের জন্য এক প্রতীকী জয়।’’ এর আগে নানা শুনানির দিন শোভন-বৈশাখী একসঙ্গে কোর্টে এলেও এদিন দুজনের কেউ আসেননি। তবে রত্না নিজের ছেলে ঋষি ও কয়েকজন ঘনিষ্ঠ অনুগামী নিয়ে এজলাসে ছিলেন। কোর্ট চত্বরেই মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ট্যাটু ভরা দু’হাত বাড়িয়ে বাবার উদ্দেশে ঋষির আর্তি ছিল, ‘‘প্লিজ পাপা, কামব্যাক পাপা। নাথিং ইজ টু লেট। উই উইল ফিক্স ইট (প্লিজ, বাবা তুমি ফিরে এসো। কিছুই এখনও দেরি হয়ে যায়নি। আমরা সবটা ঠিক করে নেব)।’’

    ছেলের এই আর্তি নিয়ে অবশ‌্য কোনও মন্তব‌্য করেননি কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক। রায়ের পর সংবাদমাধ‌্যমের এক প্রশ্নের উত্তরে শোভন বলেন, ‘‘আমি শুনেছি আদালতের রায়ে এটা বলা হয়েছে যে, এই বৈবাহিক সম্পর্ক অত্যন্ত তিক্ততা এবং শত্রুতার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে এবং মেরামতির পথ নেই। সেই কারণেই একসঙ্গে থাকার আর্জি খারিজ করা হয়েছে। আদালত যদি মেনে নিয়েই থাকে যে, এই সম্পর্ক অত্যন্ত তিক্ত এবং মেরামতির অবকাশ নেই, তা হলে বিচ্ছেদেই বা আপত্তি থাকবে কেন, বুঝতে পারছি না।’’ নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ইঙ্গিত দিয়ে এদিন শোভন বলেছেন, ‘‘আমি যা বলছি, তার অনেক কিছুই আদালতের রায়েও প্রতিফলিত হয়েছে বলে শুনেছি। যেগুলো প্রতিফলিত হয়নি, তা যাতে আইনের চোখে সিদ্ধ হয়, সে পদক্ষেপও করব। যেখানে যে লড়াই আমাকে করতে হয়, আমি লড়ব। সত্যের জয় হবে বলে আমার বিশ্বাস রয়েছে।’’
  • Link to this news (প্রতিদিন)