হিন্দু-মুসলমানের ডিএনএ একই, “অখণ্ড ভারতের” ইতিহাস টেনে আনল আরএসএস...
আজকাল | ৩০ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ)-এর শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ফের বিতর্কিত বক্তব্য রাখলেন সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত। মঙ্গলবার, “১০০ ইয়ারস জার্নি অফ আরএসএস: নিউ হরাইজনস” শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি দাবি করেন— হিন্দু ও মুসলমানসহ “অখণ্ড ভারত”-এর ভূখণ্ডে বসবাসকারী সকল মানুষের ডিএনএ গত চল্লিশ হাজার বছর ধরে একই রকম রয়ে গিয়েছে।
ভাগবতের বক্তব্য অনুযায়ী, যাঁরা এই ভূখণ্ডে বাস করেন, তাঁরা সবাই হিন্দু, যদিও কেউ কেউ নিজেদের হিন্দু বলে স্বীকার করেন না বা ভুলে গিয়েছেন যে তাঁরাও হিন্দু। এ প্রসঙ্গে তিনি হিন্দুদের চার ভাগে ভাগ করেন—১. যারা গর্বের সঙ্গে নিজেদের হিন্দু পরিচয় মানেন,২. যারা জানেন তাঁরা হিন্দু কিন্তু বিশেষ গুরুত্ব দেন না,৩. যারা জানেন অথচ বিভিন্ন কারণে নিজেদের হিন্দু বলতে চান না,৪. যারা জানেনই না তাঁরা হিন্দু।
তবে ভাগবতের মতে, যাঁরা নিজেদের হিন্দু বলতে চান না, তাঁরাও ‘হিন্দাভি’ বা ‘ভারতীয়’ পরিচয়ে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। অনেকে আবার নিজেদের ‘সনাতনী’ হিসেবেও মেনে নেন। তিনি বলেন, “যদি কেউ হিন্দু শব্দটি মানতে না চান, তাতে অসুবিধা নেই। কিন্তু তাঁরা যদি হিন্দাভি বা ভারতীয় পরিচয়ে বিশ্বাস করেন, তাহলেই যথেষ্ট— কারণ এর মর্মে রয়েছে ভক্তি ভরত মাতার প্রতি এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের সাধারণ ঐতিহ্যের প্রতি।”
ভাগবত সভায় বলেন, আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে ড. কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার আরএসএস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়— “অন্যরা কেন বাদ পড়লেন?” এর উত্তরে তিনি একটি ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা দেন। তাঁর দাবি, প্রাচীন ইরানের মানুষরা সিন্ধু নদীর ওপারে বসবাসকারী মানুষদের ‘হনদ’ নামে ডাকত। সেখান থেকেই ক্রমে ‘হিন্দু’ শব্দের উদ্ভব হয়। তিনি বলেন, এই ভূমিতে বহু দেবতা ও বহু ধর্মগ্রন্থে বিশ্বাস ছিল, কিন্তু সর্বজনীন ধারণা ছিল— সব পথ এক গন্তব্যে পৌঁছায়। “যে কেউ এই ঐক্যের দর্শনে বিশ্বাস করে, সে-ই হিন্দু,” মন্তব্য করেন ভাগবত।
ভাগবত জানান, হিন্দু হওয়া মানেই “হিন্দু বনাম অন্য সবাই” নয়, বরং হিন্দু মানে সর্বসমেত একটি ঐক্য। তাঁর কথায়, “আমাদের ঐতিহ্যই হলো একসঙ্গে থাকা। আমরা বিশ্বাস করি না যে এক হতে হলে একরকম হতে হবে। বৈচিত্র্য আসলে ঐক্যেরই ফল।” তিনি আরও উদাহরণ টেনে বলেন, যেমন কেউ শরীর ভালো রাখতে ব্যায়াম করেন— লড়াই করার জন্য নয়, তেমনি সংঘও কারও বিরুদ্ধে নয়, বরং সমাজকে সুস্থ রাখার জন্য কাজ করে।
এটি প্রথম নয় যে ভাগবত হিন্দু-মুসলমানের একই পূর্বপুরুষ বা অভিন্ন ডিএনএ নিয়ে মন্তব্য করলেন। ২০২১ সালেও তিনি বলেছিলেন, “হিন্দু ও মুসলমানের পূর্বপুরুষ এক, তাঁদের ডিএনএ একই।” সেই সময় তাঁর বক্তব্যে আরএসএসের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। মঙ্গলবারও তিনি সেই অবস্থান পুনরায় জোর দিয়ে বলেন— “হিন্দু শব্দটি আমাদের মাতৃভূমি, পূর্বপুরুষ ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের সমার্থক। প্রত্যেক ভারতীয়ই আসলে হিন্দু।” রাজনৈতিক মহল মনে করছে, আরএসএস প্রধানের এই মন্তব্য বিজেপির বর্তমান ‘হিন্দুত্ববাদী’ রাজনৈতিক কৌশলকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে। একদিকে মুসলমানদের সঙ্গে ডিএনএ-সমতার বার্তা দিয়ে তিনি সৌহার্দ্যের ইঙ্গিত দিচ্ছেন, অন্যদিকে ‘হিন্দু’ শব্দকে সমগ্র ভারতীয় পরিচয়ের সমার্থক করে তোলার চেষ্টা করছেন। ফলে এটি কেবল ঐক্যের বার্তা নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক প্রকল্প হিসেবেও দেখা যেতে পারে।