• তিমির শিকার পদ্ধতিতেই রোখা যাবে সাইবার হামলা, অভিনব পন্থা এনআইটির অধ্যাপকের
    বর্তমান | ৩০ আগস্ট ২০২৫
  • দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: সাইবার হানা। বিশ্বজুড়ে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার শীর্ষব্যক্তিদের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। কীভাবে তার মোকাবিলা করা যেতে পারে? এক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ‘হাতিয়ার’ হয়ে উঠেছে তিমি মাছের শিকার করার কৌশল। সেই কৌশল মেনেই আটকানো যাবে সাইবার হানা। এমনই অভিনব পথ উদ্ভাবন করেছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এনআইটি), রাউরকেল্লার অধ্যাপক প্রভাতকুমার রায়। এই পদ্ধতিতে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হবে ওয়েভ-লাইক ট্র্যাপ। সেই জাল ভেদ করা সাইবার হানাদারদের পক্ষে কার্যত অসম্ভব বলে দাবি উদ্ভাবক বিজ্ঞানী অধ্যাপক এবং তাঁর সহযোগী দলের। তাঁদের মতে, ওয়েভ-লাইক ট্র্যাপ ভেদ করতে না পারলে সুরক্ষিত থাকবে ‘মাইক্রোগ্রিড’। তার পরিচালনগত কন্ট্রোল হারাবে না। অর্থাৎ, কোনওমতেই সেই নিয়ন্ত্রণ কব্জা করতে পারবে না সাইবার হানাদাররা। ‘মাইক্রোগ্রিড’ নিরাপদে থাকলে আটকানো যাবে এই সংক্রান্ত যাবতীয় বিপর্যয়।

    সৌর, বায়ুশক্তির মতো পুননর্বীকরণ সংক্রান্ত ‘এনার্জি’ অক্ষুণ্ণ রেখে পরিষেবা নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে ‘মাইক্রোগ্রিড’-এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ পরিষেবার ক্ষেত্রেও ‘মাইক্রোগ্রিড’ একইভাবে কাজ করে চলে। এক্ষেত্রে পরিচালনগত ক্ষমতা যদি কোনওমতে সাইবার হানাদারদের কব্জায় চলে যায়, তাহলে বড়সড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকে। এই প্রেক্ষিতে এনআইটির অধ্যাপকের এহেন উদ্ভাবন তাই নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যাপক প্রভাতকুমার রায় ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রধান। তাঁর সহযোগী দলের অন্য সদস্যরা হলেন এনআইটি রাউরকেল্লার রিসার্চ স্কলার রমেশচন্দ্র খামারি, কেওনঝড় গভর্নমেন্ট কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডঃ মনোজকুমার সেনাপতি এবং ইউনিভার্সিটি অব সাউথ-ইস্টার্ন নরওয়ের অধ্যাপক সঞ্জীবকুমার পদ্মনাভন। অধ্যাপক রায় এবং তাঁর সহযোগী দলের সদস্যদের এই অভিনব উদ্ভাবন প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্স জার্নাল ‘আই ট্রিপল ই ট্রানজাকশনস অন কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স’-এ। 

    সামগ্রিক উদ্ভাবনের বিষয়ে ‘বর্তমান’কে অধ্যাপক প্রভাতকুমার রায় বলেন, ‘তিমি মাছের শিকার পদ্ধতি অত্যন্ত অভিনব। মাছ শিকারের আগে জলের মধ্যে ক্রমাগত বুদবুদ তোলে নীল তিমি। ফলে একটি ট্র্যাপ তৈরি হয়। বিশেষ কারণে মাছের ঝাঁক ওই জালের প্রতি আকর্ষিত হয়ে পড়ে। কিন্তু তা ভেদ করা দুরূহ হয়। ফলে তিমি মাছের পক্ষে শিকার সহজসাধ্য হয়ে যায়। এই কৌশলকেই আমরা কাজে লাগিয়েছি।’ অধ্যাপক আরও বলেন, ‘এক্ষেত্রেও একটি টিউনিং প্যারামিটার কাজে লাগানো হবে। মাইক্রোগ্রিডে পরিচালনগত ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে আনতে সাইবার হানা হলেও সেই ‘ওয়েভ’ আমাদের জালকে ভেদ করতে পারবে না। ফলে কন্ট্রোল অন্যদের হাতে যাবে না। আমরা সুরক্ষিত থাকব।’ প্রসঙ্গত, এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘মডিফায়েড ইনপ্রুভড হোয়েল অপটিমাইজেশন’ (এমআইডব্লুও)। বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, ‘মাইক্রোগ্রিড’-এ সাইবার হানা দেওয়া তুলনায় সহজ। ফলে এই ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন থাকতে হয়। এই নতুন উদ্ভাবন যাবতীয় আশঙ্কা অনেকটাই কমিয়ে দেবে।
  • Link to this news (বর্তমান)