• বাংলা বললেই বিদেশি! সুপ্রিম তোপ, বাংলাদেশি নিশ্চিত না হয়েই কীভাবে পুশব্যাক? কেন্দ্রের জবাব তলব
    বর্তমান | ৩০ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি? কীভাবে এত নিশ্চিত হচ্ছে কেন্দ্র? নিশ্চিত হওয়ার আগেই কি কাউকে শুধুমাত্র বাংলাভাষী হওয়ার কারণে বাংলাদেশে পাঠানো যায়? বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘পুশব্যাক’ ইস্যুতে এবার সুপ্রিম কোর্টের কড়া প্রশ্নের মুখে মোদি সরকার। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী শুক্রবার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন কেন্দ্রকে, ‘কেউ জোর করে ঢুকতে চাইছে, আর কেউ ইতিমধ্যেই বসবাস করছেন, দু’টি বিষয় কি এক? তাছাড়া শুধু বাংলায় কথা বলার জন্য কীভাবে কাউকে বিদেশি বলে ধরে নিচ্ছে সরকার? অন্য দেশেই বা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে কীভাবে?’ 

    গত কয়েকমাস ধরেই ভিনরাজ্যে আক্রান্ত হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকরা। প্রথমে বাংলার আরও এক যুবককে পে লোডারের সাহায্যে সীমান্তের ওপারে পাঠানো হয়েছিল। এরপর বীরভূমের আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবি সহ ছ’জনকে বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করার অভিযোগ উঠেছে দিল্লি পুলিসের বিরুদ্ধে। বর্তমানে প্রতিবেশী দেশের জেলে বন্দি তাঁরা। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড। এদিন সেই আবেদনের শুনানি ছিল বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি বিপুল এম পাঞ্চোলির বেঞ্চে। সেখানেই কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে বিচারপতিদের কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হল। শুনানির পর্যবেক্ষণে বিচারপতি বাগচী এও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ এবং পাঞ্জাবের মানুষ যে ভাষায় কথা বলেন, সেই একই ভাষা ব্যবহার করেন প্রতিবেশী দুই দেশের (বাংলাদেশ ও পাকিস্তান) নাগরিকরা। সংস্কৃতিও কিছু ক্ষেত্রে এক। তাদের ভাগ করেছে সীমান্ত। তাই ভাষা এক হলেই বিদেশি, সঠিকভাবে যাচাই না করে কি এটা বলে দেওয়া যায়?’ 

    সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণ এবং প্রশ্নের পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ‘মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে যুগান্তকারী নির্দেশ ও পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। সীমান্ত রাজ্য হিসেবে বাংলার ঐতিহাসিক ভূমিকার স্বীকৃতি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মিলেছে। বাংলার অনন্য অবস্থান নিয়ে এই সর্বোচ্চ স্বীকৃতি বাংলাভাষী অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিককে আশা জোগাবে। আমি আমার পরিযায়ী শ্রমিক ভাইবোনদের পাশে দৃঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বিচারবিভাগের উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে।’

    যদিও বাংলা বলার জন্য কেউ হেনস্তা হচ্ছেন, মানতে নারাজ মোদি সরকার। সলিসিটর জেনারেল বলেন, ‘মিডিয়ার রিপোর্ট দেখে বিচার করলে হবে না। ভারত অবৈধ বসবাসকারীদের রাজধানী নয়। অত্যন্ত সুচারুভাবে অনুপ্রবেশ হচ্ছে। এটা রুখতেই হবে। কেন্দ্র এ ব্যাপারে কোনও আপস করবে না। আমেরিকায় তো সীমান্তে পাঁচিল দেওয়া আছে।’ একথা শুনেই চেপে ধরেন বিচারপতি বাগচী, ‘তবে কি আপনারাও আমেরিকার মতো সীমান্তে পাঁচিল দিতে চাইছেন?’ তুষার মেহতা অবশ্য তড়িঘড়ি বলে ওঠেন, ‘না, না। প্রসঙ্গক্রমে বললাম।’ 

    শুনানিতে আবেদনকারী বোর্ডের আ‌ইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ‘অহেতুক বাংলাদেশি তকমা দিয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে বাংলাভাষীদের।’ সোনালি বিবির প্রসঙ্গও টানেন তিনি। প্রশ্ন তোলেন, ‘বাংলাদেশ ওঁকে গ্রেপ্তার করেছে। বলছে, উনি নাকি ভারতীয়। তাহলে এই মহিলা এখন কী করবেন? এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে মামলা রয়েছে বলে হাইকোর্ট শুনছে না।’ 

    একথা শুনে কেন্দ্রের উদ্দেশে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘এই অভিযোগ কি সত্যি? বাংলায় কথা বললেই কি তাকে বাংলাদেশি বলা হচ্ছে? অসম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গে কি অনুপ্রবেশ হচ্ছে?’ এরপরই কেন্দ্রের জবাবদিহি চেয়ে নোটিস ইস্যু করে সুপ্রিম কোর্ট। গুজরাতে বাঙালিদের হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে জেনে সে রাজ্যের সরকারকেও মামলায় বিবাদী করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১১ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানি। যদিও এদিন কলকাতা হাইকোর্টের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের মামলার সঙ্গে হাইকোর্টের ওই (হেভিয়াস করপাস) মামলার কোনও যোগ নেই। 
  • Link to this news (বর্তমান)