পরপর পদক্ষেপ রাজ্যের, দিশেহারা গেরুয়া শিবির, মুখরক্ষা করতে চা শ্রমিকদের নিয়ে দিল্লি যাওয়ার পরিকল্পনা বিজেপির
বর্তমান | ৩০ আগস্ট ২০২৫
সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: নবান্ন ইতিমধ্যেই চা শ্রমিকদের ২০ শতাংশ পুজো বোনাস ঘোষণা করেছে। বহু বন্ধ বাগানও খুলে দিয়েছে। বাকি বন্ধ বাগান খুলতে উদ্যোগী হয়েছে। সেখানে ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে দিল্লি যাওয়ার তোড়জোড় করছে বিজেপি। তবে এখনই নয়। বাদল অধিবেশনের সময়েই শ্রমিকদের নিয়ে দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল গেরুয়া শিবিরের। কিন্তু ঢাকঢোল পিটিয়ে শ্রমিকদের কথা দিয়েও বিজেপি সেই কথা রাখতে পারল না। তারা যাচ্ছে কিছুদিন পরে। বিরোধীদের দাবি, এখন এক দিকে মুখ বাঁচাতে, অন্যদিকে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে চা শ্রমিকদের শীতে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে পদ্মপার্টি।
চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি, বন্ধ বাগান খোলা, পিএফ সমস্যা, পানীয় জল সহ নানা সমস্যা নিয়ে শ্রমিকদের দিল্লি নিয়ে যাওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের দলীয় এমপিদের সেই কর্মসূচিতে থাকার কথা ছিল। লোকসভার বাদল অধিবেশন চলাকালীন শ্রমিকদের নিয়ে শ্রম, ভারী শিল্প, বাণিজ্য সহ একাধিক মন্ত্রকের মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। কিন্তু ভোটব্যাঙ্কে ধস নামায় চা বলয়ে ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে গেরুয়া শিবির। বাদল অধিবেশনের সময় চা শ্রমিকদের নিয়ে বিজেপির সেই দিল্লি যাত্রা মুখ থুবড়ে পড়ে।
যদিও এমপি মনোজ টিগ্গার সাফাই, শ্রমিকদের নিয়ে আমাদের দিল্লির ওই কর্মসূচি হবেই। আসলে বাদল অধিবেশনের সময় একসঙ্গে একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সাক্ষাতের সময় মিলছিল না। সেই জন্যই শ্রমিকদের নিয়ে শীতকালীন অধিবেশনের সময় দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিজেপির চা শ্রমিক সংগঠন বিটিডব্লুইউয়ের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ বারলা বলেন, রাজ্য সরকারের ব্যর্থতায় চা শিল্প ধুঁকছে। আমরা একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে চা শিল্পের এই দূরবস্থার কথা জানাব।
এদিকে বিজেপি নেতৃত্ব এই সাফাই দিলেও রাজনৈতিক মহলের কিন্তু ধারণা, চা বলয়ে বিজেপির শ্রমিক সংগঠন এখন ছন্নছাড়া। বহু বাগানে এখন বিজেপির শ্রমিক সংগঠনের ইউনিট নিষ্ক্রিয়। চা বলয়ে ভোটব্যাঙ্কেও ধস নেমেছে। শ্রমিকরাও এখন বুঝতে পারছে বাগান ও শ্রমিকদের উন্নয়নে কাজ করছে রাজ্য সরকার। তারই জেরে বিজেপির প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে শ্রমিকদের। রাজনৈতিক মহল বলছে, তাই বিজেপি নেতৃত্ব যতই অজুহাত দিক না কেন শ্রমিকদেরই দিল্লি যাওয়ার কোনও উৎসাহ নেই।
সেই কারণে চব্বিশের লোকসভা ভোট থেকে আলিপুরদুয়ারে বিজেপির ভোট কমতে থাকে। উনিশের ভোটে বিজেপি আড়াই লাখ ভোটে জিতেছিল আলিপুরদুয়ারে। সেখানে চব্বিশে সেই ভোট ৭৬ হাজারে নেমে আসে। পরে মাদারিহাট বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপিকে তৃণমূলের কাছে গো-হারা হারতে হয়।
তৃণমূল চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান নকুল সোনার শ্রমিকদের নিয়ে বিজপির দিল্লির কর্মসূচিকে কটাক্ষ করে বলেন, চা বলয়ে ওদের সংগঠনে ধস নেমেছে। সেই জন্যই শ্রমিকদের নিয়ে বিজেপির দিল্লির কর্মসূচি মুখ থুবড়ে পড়েছে।