নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: স্বভাব বদলে কেন ‘মানুষ খেকো’ হয়ে উঠছে ডুয়ার্সের চিতাবাঘ? তারই কারণ খুঁজতে এখন কালঘাম ছুটছে বনদপ্তরের। আড়াই মাসে দু’জনকে খুবলে খেল লেপার্ড। গত একবছরে সংখ্যাটা চার। চিতাবাঘের হামলায় জখম হয়েছে আরও অনেকে। একের পর এক ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে বনদপ্তরের কর্তাদের। একটির সঙ্গে অন্যটির ঘটনাক্রম মিলিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে।
সত্যিই কি ডুয়ার্সের লেপার্ড ‘মানুষ খেকো’ হয়ে উঠেছে, নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও কারণ, সেটাই এখন খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন বনকর্তারা। প্রাথমিকভাবে তাঁদের দাবি, জঙ্গলে হরিণের পিছনে ছুটে শিকারের চেয়ে সহজে খাবার পাওয়ার লোভেই চা বলয়ে হানা দিচ্ছে লেপার্ড। এই পরিস্থিতিতে ডুয়ার্সে চিতাবাঘের ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করতে এবার সমীক্ষায় নামছে বনদপ্তর। চা বাগান এলাকায় চিতাবাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন স্থানীয়দের পাশাপাশি বনদপ্তরের আধিকারিকরা। সেক্ষেত্রে সার্ভে করে কোন এলাকায় চিতাবাঘের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সেব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ভাবছে বনদপ্তর।
গোরুমারার ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেন বলেন, চিতাবাঘের ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করতে আমরা সার্ভে করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এনিয়ে উপর মহলে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মূলত চা বাগান ও বনবস্তি এলাকায় লেপার্ড সার্ভের কথা ভাবা হচ্ছে। তাঁর দাবি, চিতাবাঘের ঘ্রাণশক্তি প্রখর হলেও দৃষ্টিশক্তি অতটা ভালো নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ছাগল-বাছুরের গন্ধে হানা দিচ্ছে লেপার্ড। কোনওভাবে শিকার মিস হওয়াতেই তারা ঝাঁপিয়ে পড়ছে আশপাশে থাকা শিশু-কিশোরদের উপর। আমরা বারবার সচেতন করছি, জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় ছাগল-বাছুর যেন বসতির সঙ্গে না পালন করা হয়। আংরাভাসার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১২ বর্গ কিমি এলাকাজুড়ে অন্তত ২০টি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ছাগলের টোপ দিয়ে খাঁচা পাতা হয়েছে ছ’টি। ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি চলছে বলেও জানিয়েছেন ডিএফও।
ডুয়ার্সের চিতাবাঘ যে ‘মানুষ খেকো’ হয়ে উঠেছে, তা অবশ্য এখনই মানতে নারাজ বন আধিকারিকরা। তাঁদের বক্তব্য, স্বভাব বদলে লেপার্ড যদি ‘মানুষ খেকো’ হয়ে উঠত, সেক্ষেত্রে মানুষ মারার পর তার মাংস খেয়ে নিত। তেমনটা হচ্ছে না। কখনও চিতাবাঘের থাবায় শিশু-কিশোরের মৃত্যু হচ্ছে, কোনওক্ষেত্রে ঘাড় মটকে মেরে দেহ ফেলে পালাচ্ছে লেপার্ড। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, মানুষের মাংসে ‘রুচি’ নেই চিতাবাঘের।
তাহলে ডুয়ার্সের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে কেন একের পর এক শিশু-কিশোরকে ‘সফ্ট টার্গেট’ করছে এরা? বনদপ্তরের এক কর্তা বলেন, আমরা প্রতিটি ঘটনার স্কেচ তৈরি করছি। দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ ঘটনা ঘটছে সন্ধ্যার পর। তিন থেকে দশ-বারো বছর বয়সিদের টার্গেট করছে লেপার্ড। হামলার সময় এরা কেউ উবু হয়ে বসেছিল। কেউ সামনে ঝুঁকে কুয়োয় জল তুলছিল। কেউ আবার বাছুর নিয়ে মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছিল। এসব ঘটনাক্রম থেকে দু’টি সম্ভাবনা উঠে আসছে, হয়তো বুঝতে না পেরে আচমকা তাদের উপর হামলা চালাচ্ছে চিতাবাঘ। আর তা না হলে শিকারের ‘টার্গেট মিস’ করার আক্রেশে মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে লেপার্ড। এনিয়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের দ্বারস্থ হচ্ছি।