কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের বহু জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত, কলকাতায় সেচদপ্তরে বৈঠক
বর্তমান | ৩০ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে একাধিক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত নদী বাঁধ। কোথাও বাঁধে চিড় ধরেছে, কোথাও মাটি ধসেছে। আবার কোথাও তারজালি দিয়ে নির্মীয়মাণ বাঁধের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, তিস্তা নদীর জল ফের ঢুকেছে হলদিবাড়ির দু’টি গ্রামে। শুক্রবার মিনি সচিবালয় উত্তরকন্যায় এমন রিপোর্ট পাঠিয়েছে সেচদপ্তর। এদিনই উত্তরবঙ্গের নদীগুলির গতিবিধি নিয়ে কলকাতায় রাজ্যের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেচদপ্তরের উত্তর-পূর্ব বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক। এদিকে, এক রাতে ভারী বৃষ্টি হয়েছে ছ’টি জায়গায়। যারজেরে শিলিগুড়ি শহরের খানাখন্দে ভরা কিছু রাস্তা কার্যত পুকুরে পরিণত হয়েছে। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলায় নদীর সংখ্যা অসংখ্য। চলতি বর্ষার মরশুমে সেগুলির জলস্তর ঘনঘন ওঠানামা করছে। এজন্য কিছু নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সেচদপ্তর সূত্রে খবর, ওই নদীগুলির মধ্যে মাথাভাঙার ধরলা নদী অন্যতম। এদিন নিশিগঞ্জ-১ পঞ্চায়েতের কোদালধোয়া গ্রামে বাঁধের প্রায় ৪০০ মিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধের সংশ্লিষ্ট অংশের কোথাও চির ধরেছে, আবার কোথাও ধসে গিয়েছে মাটি। এছাড়া ওই গ্রামেই তারজালি ও বোল্ডার দিয়ে বাঁধের একাংশ তৈরির কাজ চলছিল। নির্মীয়মাণ সেই তারজালিও ভেঙেছে।
এরবাইরে দিনহাটা-২ ব্লকে কিশমত দশগ্রামে বানিয়াদহ নদীর পাড় ভাঙছে। গোবরাছড়া পঞ্চায়েতের টুটিয়ারকুঠি গ্রামেও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে বানিয়াদহ নদী। এখানেও নদী পাড় ভেঙেছে। আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রামের ছোট দলদলি গ্রামেও রায়ডাক-২ নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত। সংশ্লিষ্ট এলাকায় বাঁধের প্রায় ১৫০ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলি নিয়ে আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলি অবিলম্বে মেরামত করা প্রয়োজন। নদীর জলস্তর বাড়লেই বাঁধের সেই অংশ দিয়ে গ্রামে জল ঢুকতে পারে। একই সঙ্গে হলদিবাড়ির বিবিগঞ্জ ও ঝাড়সিংশ্বর গ্রাম দু’টিতে ফের ঢুকেছে তিস্তার জল।
এই অবস্থায় এদিন কলকাতায় উত্তরবঙ্গের নদী, বাঁধ ও পাড়ের অবস্থা নিয়ে রিপোর্ট দেন সেচদপ্তরের উত্তর-পূর্ব বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের নদীগুলির গতিবিধি, ভাঙন, বাঁধের অবস্থা সহ বিভিন্ন বিষয়ে শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তবে এদিন কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলায় কয়েকটি বাঁধে ক্ষতি হয়েছে বলে শুনেছি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় জলপাইগুড়ি, মোহিতনগর, শিলিগুড়ি সহ ছ’টি এলাকায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, জলপাইগুড়িতে ১০৭.১০, মোহিতনগরে ১০৯.৪০, গজলডোবায় ৮৭.১২, নাগরাকাটায় ৭৪.৪০, শিলিগুড়িতে ৯২ এবং শালবাড়িতে ৭১.৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরজেরে শিলিগুড়ি শহরের পবিত্রনগর, ভানুনগর, ঝঙ্কারমোড় থেকে মাটিগাড়া পর্যন্ত রাস্তা যেন পুকুর। নর্মদাবাগানে সেতুর অবস্থাও শোচনীয়। স্থানীয়দের বক্তব্য, রাস্তাগুলি দিয়ে নৌকার মতো দুলতে দুলতে চলছে টোটো, অটো ও স্কুলবাস। যেকোনও সময় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে উল্টে পড়তে পারে। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব অবশ্য বলেন, সংশ্লিষ্ট রাস্তাগুলি নজরে রয়েছে। শীঘ্রই সেগুলি মেরামত করা হবে।