পুলিসি হেফাজতে আড়ষায় যুবকের মৃত্যু, তদন্ত শুরু সিআইডির জেরা পরিবারের সদস্যদের
বর্তমান | ৩০ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: পুলিসি অত্যাচারে আড়ষার যুবক মৃত্যুর ঘটনার তদন্তভার সিআইডিকে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই মতো সিআইডির হোমিসাইড শাখা তদন্ত শুরু করেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার ওই তদন্তকারী দল আড়ষায় পৌঁছয়। বৃহস্পতিবারও তাঁরা আড়ষা এসেছিলেন। মূল অভিযোগকারী তথা মৃত যুবক বিষ্ণু কুমারের ভাই সমন কুমার, বিষ্ণুর স্ত্রী, মা সহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। এছাড়াও ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সিআইডির তদন্তকারীরা। যেদিন বিষ্ণুকে থানায় পুলিস তুলে নিয়ে গিয়েছিল, ওইদিন একটি মদের ভাটিতে বিষ্ণু মোবাইলটি কুড়িয়ে পেয়েছিল বলে দাবি। তদন্তের স্বার্থে তদন্তকারীরা সেখানেও যান বলে খবর।
মৃতের ভাই বলেন, সিআইডির তদন্তকারীরা এসেছিলেন। দু’দিন ধরে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, সিআইডিকে তদন্তে সহযোগিতা করতে গ্রামের অনেকেই ভয় পাচ্ছেন। কারণ বিষ্ণুর মৃত্যুর পর এলাকাবাসীর ডাকা বন্ধকে কেন্দ্র করে এলাকায় তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে ছিল। সেই ঘটনায় বহু নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিস। এছাড়াও অনেকের বিরুদ্ধে পুলিস পরোয়ানা জারি করেছিল। ভয়ে অনেকে ঘরছাড়া ছিলেন। সিআইডির তদন্তকারীরা আসছেন দেখে গ্রামের অনেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে আবার ভয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না। স্থানীয় বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি পার্থসারথি মাহাত বলেন, পুলিসি অত্যাচারে বিষ্ণু কুমারের মৃত্যুর প্রতিবাদে আমরা একটা বন্ধ ডেকেছিলাম। ওইদিন পুলিস এলোপাথাড়ি লাঠিচার্জ করেছিল আন্দোলনকারীদের উপর। ছ’জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। এছাড়াও বহু বিক্ষোভকারীকে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দিয়েছিল। তাই এলাকাবাসীর মধ্যে এখনও আতঙ্কের ছাপ রয়ে গিয়েছে। গ্রামে সিআইডির তদন্তকারীদের গাড়ি ঢুকতে দেখলেই অনেকে বাড়ির দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন। ভয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না। সিপিএমের যুব সংগঠনের সভাপতি সুব্রত মাহাত বলেন, সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে সিআইডি নিরপেক্ষ তদন্ত করবে বলে আশা করি। যদি তা না করে তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই মোবাইল চুরির অভিযোগে আড়ষার বাসিন্দা বিষ্ণু কুমারকে(৩৪) পুলিস থানায় তুলে নিয়ে যায়। গত ১৯ জুলাই মৃত্যু হয় বিষ্ণুর। পুলিসি মারধরের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বিষ্ণুর পরিবার। প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অসন্তুষ্ট হয়ে কল্যাণী এইএমসে দেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি। আদালত সূত্রের খবর, বিষ্ণুর দেহের প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ ‘স্বাভাবিক’ বলে উল্লেখ ছিল। শরীরে কোনও প্রকার আঘাতের চিহ্নের কথা রিপোর্টে উল্লেখ ছিল না। যদিও এইএমএসের রিপোর্টে দেহে আঘাতের চিহ্নের প্রমাণ মেলে। বিচারপতিকে বলতে শোনা যায়, ‘একজন সাধারণ মানুষও প্রথম ও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখলে পার্থক্য বুঝতে পারবে।’ এরপরেই গত ১৯ আগস্ট মামলার শুনানিতে বিষ্ণু মৃত্যুর তদন্তভার তিনি সিআইডিকে দেন। এক মাসের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট সিআইডিকে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।