নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: শুক্রবার কৃষ্ণনগর পোস্টাল ডিপার্টমেন্টের সুপার অফিসের বাইরে জমায়েত করেছিলেন বহু মানুষ। কেউ এসেছেন বীরনগর থেকে, কেউ থাকেন কৃষ্ণগঞ্জে। আবার কারও বাড়ি হাঁসখালি ব্লকে। প্রত্যেকের হাতেই রয়েছে আদালতের হলফনামা সহ নিজেদের পরিচয় পত্রের বিভিন্ন নথি। পালা করে ডাক বিভাগের আধিকারিকের ঘরে ‘শুনানি’র জন্য যাচ্ছেন তাঁরা। পরিচয়পত্র দাখিল করে বেরিয়েও আসছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তারা সকলেই এসেছেন ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায়। সবমিলিয়ে এদিন কৃষ্ণনগর সুপার অফিসে ৩৫ জন সিএএ আবেদনকারীদের শুনানি কথা ছিল। ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচন আসতেই সীমান্তের নদীয়া জেলায় ফের শুরু হয়ে গিয়েছে নাগরিকত্ব প্রদানের প্রক্রিয়া। আর সেই কাজ চলছে সঙ্ঘ এবং পদ্মপার্টির নেতাদের তত্ত্বাবধানেই।
এদিন পোস্ট অফিসের বাইরে দেখা গেল, আবেদনকারীদের যাবতীয় নথিপত্র দেখাশোনা, প্রাথমিক যাচাইয়ে কাজ করে দিচ্ছেন গেরুয়া শিবিরের লোকজনই। নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীদের ‘হিন্দু শংসাপত্র’ও ‘বিলি’ হচ্ছে তাঁদের হাত ধরেই। এবিষয়ে জানতে চাইলে তাঁদেরই একজন বললেন, ‘নথিপত্র দিলে হলফনামা সহ ধর্মীয় শংসাপত্রের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’ যার জন্য খরচ পড়বে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা। সেইরকমই এক আবেদনকারীর থেকে পাওয়া গেল ধর্ম শংসাপত্র। যা দিয়েছে নবদ্বীপের ‘জন্মস্থান উন্নয়ন পরিষদ’ নামে এক সংস্থা। সেটি ইস্যু হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ২৪ তারিখ। এ ব্যাপারে কৃষ্ণনগর পোস্টাল ডিপার্টমেন্টের সুপার সমর গোয়ালদার বলেন, ‘সিএএ ভেরিফিকেশনের কিছু শুনানি চলছে। আমি এখানে যোগদানের পর এনিয়ে দ্বিতীয়বার শুনানি করছি।’ এ বিষয়ে কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, ‘ভোট এলেই বিজেপির মাথায় আসে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা। আসলে, বিজেপির জনসংযোগ নেই বলেই প্রতিবার সিএএ’এর গাজর ঝুলিয়ে ভোট নিয়ে চায়। সিএএ’তে আবেদন করা মানেই নিজেকে বাংলাদেশি হিসেবে প্রমাণ করা।’
ছাব্বিশে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বিধানসভা নির্বাচনেও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে সিএএ-এর মাধ্যমে নাগরিকত্ব প্রদানের টোপ দেখিয়ে পদ্মপার্টি ভোট বৈতরণী পার করতে চাইছে। সেইমতো এদিন সিএএ’র আবেদনকারীরা এসেছিলেন কৃষ্ণনগর ডাক বিভাগে। বীরনগরের এক প্রৌঢ়ও এসেছিলেন নাগরিকত্বের শুনানিতে। তিনি গত ২৭ এপ্রিল আবেদন করেছিলেন। আরএসএসের এক কর্মীর কাছে সিএএ’র ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতেই সেই যুবক বলে ওঠে, ‘আপনারা যাতে নাগরিকত্ব পান, তার জন্য আরএসএস চেষ্টা করছে।’ -নিজস্ব চিত্র