নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: চারিদিকে ঝোপঝাড়-জঙ্গল। সেখানে পরিপাটি করে বিছিয়ে রাখা পাতা। দেখলে মনে হবে সাজানো বিছানা। সেখানে পাতার তৈরি চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে কেউ। পাতা সরাতেই চক্ষুচড়কগাছ স্থানীয় বাসিন্দাদের। উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে এক তরুণীর অর্ধনগ্ন দেহ!
ঘটনাটি আসানসোল দক্ষিণ থানার ডামরার। পুলিসে খবর যায়। চলে আসেন ডিসি, এসিপি পদমর্যাদার অফিসাররা। ভালো করে পাতা সরাতে তাঁরাও আঁতকে ওঠেন! তরুণীর মুখ থেতলানো। গলাতে প্যাঁচানো কালো দাগ। হাত ও পা পিছনের দিকে বাঁকানো। দেহের বিভিন্ন অংশ খুবলে খেয়েছে জন্তুর দল। হাড়হিম করা দৃশ্য! প্রকাশ্যে আসতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। পুলিস দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। পুলিসের প্রাথমিক অনুমান, ওই তরুণীকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। তবে, খুনের আগে তিনি ধর্ষিতা হয়েছিলেন কিনা, সেটা তদন্ত সাপেক্ষ বলে জানিয়েছেন উপস্থিত আধিকারিকরা। ডাকা হয়েছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদেরও। জানা গিয়েছে, সম্ভবত প্রেমের টানে তরুণী এসেছিলেন এই নির্জন স্থানে। তাঁর বাড়ি হীরাপুর থানা এলাকায় বলে স্থানীয়দের মত। এসেই বোধহয় কোনও গোলমালে জড়িয়ে পড়েন। তার জেরেই তাঁকে খুন হতে হয়। তরুণীর নিম্নাঙ্গের পোশাক অক্ষত ছিল। ডিসি ধ্রুব দাস এদিন বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছি। এক তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়েছে। সবদিক খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে।’
আসানসোল পুরসভার অন্তর্গত ডামরা জনবহুল এলাকা। তবে,ঘটনাস্থলটি অত্যন্ত নির্জন। দিনেও শুনসান। মাঝে মাঝে ফাঁকা জায়গা। এইরকমই একটি ফাঁকা জায়গায় ঝোপের মধ্যে দেহটি প্রথম দেখেন স্থানীয়রাই। তাঁরাই বলাবলি করছিলেন, বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় তরুণীকে কয়েকজন যুবকের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল। পুলিস সেই সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করেছে। সন্দেহভাজন কয়েকজনের বাড়িতে হানাও দেওয়া হয়। কিন্তু, তাঁরা সকলেই বেপাত্তা। স্থানীয়দের দাবি, ডামরা এলাকার এক যুবকের সঙ্গে তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের টানেই মাঝেমধ্যে আসতেন। সেদিনও ফাঁকা জায়গায় এসেছিলেন। তারপরই কয়েকজন ছেলের সঙ্গে তাঁর অশান্তি হয়। তদন্তকারীরা জনে জনে জিজ্ঞাসাবাদ করে সূত্র খোঁজার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি চলছে তাঁর পরিচয় জানার চেষ্টাও। এদিন স্থানীয়রা বলছিলেন, এলাকাটি এতটাই নির্জন যে, দিনের বেলাতেও ভয় লাগে। সন্ধ্যা নামলেই নেশাড়ুদের ঠেক বসে। ইদানীং কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের আনাগোনাও শুরু হয়েছে। একান্তে সময় কাটাতে বহু যুগল এলাকাটিকে বেছে নিচ্ছে। ওই তরুণীও প্রিয়জনের সঙ্গে এসেছিলেন। স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই এলাকায় একটি অশান্তি হয়েছিল। খুব সম্ভবত ওই তরুণী ও তাঁর প্রেমিক দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়েছিলেন। যদিও পুলিস এনিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। ঘটনাস্থলে পুলিস। নিজস্ব চিত্র