• বালি পাচার রুখতে মহম্মদবাজারে সারপ্রাইজ ভিজিট জেলাশাসকের
    বর্তমান | ৩০ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: রাতের অন্ধকারে চুরি যাচ্ছে নদ-নদীর বালি। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বর্ষার মরশুমে বালি তুলে পাচারের একাধিক অভিযোগ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বালি চুরি রুখতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অভিযানে নামেন জেলাশাসক বিধান রায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক বিশ্বজিৎ মোদক। তাঁরা সোজা মহম্মদবাজার ব্লকের ভুতুরা পঞ্চায়েতের খয়রাকুড়ির মোল্লাই এলাকায় পৌঁছে দেখেন ময়ূরাক্ষী নদী থেকে দেদার বালি লুট হচ্ছে। অভিযানের আঁচ পেতেই ওখানে থাকা লোকজন ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায়। অনেকগুলি ট্রাক্টর তাঁর নজরে পড়ে। তারমধ্যে বেশকিছু ট্রাক্টর বালিবোঝাই ছিল। তড়িঘড়ি তিনি মহম্মদবাজার থানার আইসিকে তলব করেন। বালি লুট ও পাচারের ঘটনায় আইসিকে ধমকও দেন। সেইসঙ্গে ওখানে থাকা ট্রাক্টরগুলি বাজেয়াপ্ত করতে বলেন। 

    জেলাশাসক বলেন, যাদের নজরদারির দায়িত্ব তাদের গাফিলতিতেই জেলার নানা প্রান্তে এভাবে বালি চুরি হচ্ছে। এসব মেনে নেওয়া যাবে না। জেলা প্রশাসনের তরফে মাঝেমধ্যেই অভিযান চালানো হবে। বালি পাচার রুখতে আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, মহম্মদবাজার থানার আইসিকে সতর্ক করা হয়েছে। 

    প্রশাসনের নির্দেশে বর্ষার মরশুমে জেলার প্রতিটি বালিঘাট বন্ধ রাখা হয়েছে।  এই পরিস্থিতিতে একদল অসাধু কারবারি নদীর বালি চুরি করে পাচার করছে। জেলা প্রশাসনের দাবি, বালি পাচারের ক্ষেত্রে নম্বর প্লেটবিহীন ট্রাক্টরই বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু, পুলিসি নজরদারির ফাঁক গলে কীভাবে বালি পাচার সম্ভব? জেলা প্রশাসনের শীর্ষকর্তারাই এমন প্রশ্ন তুলছেন। যদিও জেলা পুলিসের দাবি, বালি পাচার রুখতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। সেইসঙ্গে সারপ্রাইজ নাকা চেকিংও করা হচ্ছে। এমনকী নদী ঘাটগুলিতেও নজরদারি করা হচ্ছে। নজরদারি বাড়ায় বিগত বছরগুলির তুলনায় বালিবোঝাই গাড়ি বাজেয়াপ্ত ও গ্রেপ্তারির সংখ্যা বেড়েছে। 

    পরিসংখ্যান তুলে ধরে জেলা পুলিসের দাবি, ২০২৪ সালে বালি পাচারের অভিযোগে মোট ১৭৪জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মোট ৪৮৩টি গাড়ি বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। ২০২৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সেই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। মাত্র কয়েক মাসে বালি পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে ৪৩৮ জন। অন্যদিকে মোট ৮৭৯টি গাড়ি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ওইদিন রাতেও ৭টি ট্রাক্টর বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে পুলিসের দাবি। 

    অবশ্য জেলা পুলিসের এই খতিয়ানে খুশি নন প্রশাসনের কর্তারা। জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের প্রশ্ন, পুলিসের এত নজরদারি ও অভিযান চালানো সত্ত্বেও বর্ষার মরশুমে কীভাবে বালি চুরি হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে খোদ জেলাশাসকই সারপ্রাইজ ভিজিটের উপর জোর দিতে চলেছেন। যদিও পুলিস কর্তাদের দাবি, বালি পাচার রুখতে কোনও ত্রুটি রাখা হচ্ছে না।   পুলিস সুপার আমনদীপ বলেন, আমাদের তরফে নিয়মিত নজরদারি চালানো হচ্ছে। নাকা চেকিং চলছে। সেইসঙ্গে অভিযানও চালানো হচ্ছে। বালি পাচার রুখতে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি।
  • Link to this news (বর্তমান)