বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: গড়িয়াহাট হোক বা হাতিবাগান, পুজোর বাজারে যেদিকেই চোখ যাচ্ছে, হয় আজরাখ, নয় বাগরু প্রিন্টের শাড়ি, কুর্তি, জামা। তারই জমকালো নকশা। আরও জমকালো হল এ প্রিন্টের ইতিহাস। মহেঞ্জোদারো থেকে রাজার একটি মূর্তি উদ্ধার হয়েছিল। রয়েছে পাকিস্তানের মিউজিয়ামে। ওই মূর্তিটির কাঁধে আজরাখ প্রিন্টের বস্ত্রখণ্ড। এই প্রাচীন প্রিন্টই ২০২৫ সালে কাঁপাচ্ছে কলকাতার পুজোর বাজার। দোকানদারদের বক্তব্য, ‘দাম মধ্যবিত্তের আয়ত্তের মধ্যেই।’ বাগরু এত প্রাচীন নয়। তাও রাজস্থানের এই প্রিন্টের বয়সও নয় নয় করে ৪০০ বছর হয়ে গেল।
পুজোর আগে কয়েকবার ধর্মতলা, হাতিবাগান, আর গড়িয়াহাট না ঘুরলে শপিং অসম্পূর্ণ উত্তরপাড়ার মাখলার বাসিন্দা তিস্তা চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার গড়িয়াহাটে ঘুরে ঘুরে জিনিস কিনে ব্যাগ ভারী করে ফেলেছেন। তালিকায় নতুন কী? প্রশ্নের উত্তরে ঝটিতি জবাব, ‘আজরাখ আর বাগরু প্রিন্টের কুর্তির কি সব জমকালো প্রিন্ট! চোখ এমন টেনেছে যে, তিনটে কিনে ফেললাম। যেদিকেই চোখ যাচ্ছে দেখছি এই প্রিন্টের ছড়াছড়ি।’ বারাসতের সর্বাণী রায় পুজোয় সাধারণত ব্যোমকাই বা বালুচরির মতো ঐতিহ্যবাহী শাড়ি কেনেন। এদিন নিউ মার্কেট থেকে কিনলেন আজরাখ শাড়ি। ইতিহাসের ছাত্রী সর্বাণীদেবী বলেন, পাকিস্তানের সিন্ধুতে এ প্রিন্ট কয়েক হাজার বছর আগে জন্ম নিয়েছিল। এখনও পাকিস্তান বা ভারতের পাঞ্জাবে সবথেকে জনপ্রিয় নকশা হল আজরাখ।
তবে যতই হোক, বাংলার মাটি বাংলার জলের কবি ছাড়া বাঙালির সবকিছুই অসম্পূর্ণ। ফলে এবছরও পুজোয় রবিঠাকুর ভরসা। দেশজুড়ে বাঙালির উপর আক্রমণের প্রতিবাদে কবিগুরুর সহজপাঠই হাতিয়ার। বালিকাবেলার যে ছবি ও ছড়া দেখে অক্ষরজ্ঞান হয়েছিল, সেই ছবি-ছড়াই ফুটে উঠেছে শাড়িতে। বড়বেলায় প্রতিবাদের হাতিয়ারও সহজপাঠ শাড়ি।
উত্তর কলকাতার নামজাদা শাড়ির দোকানগুলিতে বরাবরই নতুন কিছু মেলে। সে তালিকায় এবার নয়া সংযোজন ‘পজিশন সিল্ক’। সঙ্গে রংকাট, খাড্ডি। বেনারসী টেক্সটোরিয়ামের কর্ণধার তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এবার তসরের চাহিদা আছে। অভিনব ও রংদার কিছু চাইলে পজিশন সিল্ক দেখাচ্ছি ক্রেতাদের। পাশাপাশি নতুন রূপে এসেছে পশমিনা, রংকাট এবং মশরু শাড়ি। দাম আয়ত্তের মধ্যেই।’ অভিনব কালেকশন রাখেন উদ্যোগপতি তনিমা সেন। তিনি বলেন, ‘বেশি বিক্রি মসলিন আর অরগ্যাঞ্জা শাড়ির। সঙ্গে দারুণ কাটতি জিম্মি চু শাড়ির। সালোয়ারের মধ্যে জামদানি, হ্যান্ডপ্রিন্ট। পাশাপাশি কর্ড সেটও কিনছেন ফ্যাশন সচেতনরা।’
এছাড়া সিল্ক এবং সুতিতে দেবদেবীর অবয়বও এবছর ফ্যাশনে ইন। সবথেকে এগিয়ে দুর্গা ও শিব। শাড়ির আঁচলজুড়ে সপরিবার দুর্গার চালচিত্র। ‘গয়নাতেও দেবীর ছাপ,’ বললেন হাওড়ার মাকরদহের শিল্পী মিঠু ঘোষ। তিনি জানান, মাটির গয়নায় শিউলি ফুল এবং দুর্গার রূপ সবার পছন্দ এবছর। ‘পুজোর মাসখানেক বাকি। তবে এখনও নিউ মার্কেট তেমন জমেনি,’ জানালেন পান্না’র কর্ণধার সুমন দে। সালোয়ার-কামিজের পিসের নামজাদা প্রতিষ্ঠান তাঁদের।
এখন ফ্যাশন ছাড়া মাথায় কিছুই নেই আম মানুষের। আজরাখ না বাগরু, সহজপাঠ না জিম্মি চু, রংকাট না মশরু? চটজলদি ঠিক করে নিতে হবে পুজোয় কী চাই।