• প্রসব বেদনায় ছটফট তরুণীর! বিদ্যালয়ের শৌচাগার থেকে আচমকা সদ্যজাতের কান্নার আওয়াজ! মুহূর্তে হইচই পড়ে গেল চারিদিকে...
    আজকাল | ৩০ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: কর্ণাটকের যাদগির জেলার শাহাপুরের এক সরকারি আবাসিক বিদ্যালয়ে ঘটল চাঞ্চল্যকর ঘটনা। নবম শ্রেণির এক কিশোরী ছাত্রী হঠাৎই প্রসব বেদনায় আক্রান্ত হয়ে বিদ্যালয়ের শৌচাগারেই পুত্রসন্তানের জন্ম দেয়। ঘটনাটি সামনে আসতেই শিক্ষাঙ্গন থেকে প্রশাসন—সব জায়গাতেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭ বছরের ওই ছাত্রীকে প্রায় নয় মাস আগে এক যুবক যৌন নিপীড়ন করেছিল। সেই ঘটনাতেই তার গর্ভধারণ হয়। কিন্তু দীর্ঘ এই সময় তার শারীরিক অবস্থার কোনও পরিবর্তনই নজরে আনতে পারেননি স্কুল ও হোস্টেলের শিক্ষক কিংবা কর্মীরা। অবশেষে বুধবার বিকেলে সহপাঠীরা তাকে যন্ত্রণায় কাতর অবস্থায় শৌচাগারে দেখতে পেয়ে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

    খবর পেয়ে শিক্ষকরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং ছাত্রীটিকে নবজাতকসহ হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসকদের বক্তব্য অনুযায়ী, আপাতত মা ও সন্তান দুজনেই স্থিতিশীল আছেন।

    এরপরই শাহাপুর থানায় এফআইআর দায়ের হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা এবং Protection of Children from Sexual Offences (POCSO) আইন অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই ২৮ বছর বয়সী এক যুবককে গ্রেফতার করেছে এবং তাকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।

    অন্যদিকে, এতদিন ধরে ছাত্রীটির গর্ভাবস্থার খবর গোপন থাকা বা কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাত থাকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। কর্নাটক রেসিডেন্সিয়াল এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন সোসাইটি (KREIS) দ্রুত তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে গাফিলতির অভিযোগে স্কুলের প্রধান শিক্ষক, হোস্টেলের ওয়ার্ডেন, স্টাফ নার্সসহ মোট চারজনকে স্থগিত (suspended) করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রীর ভাইও বিষয়টি গোপন করেছিলেন, যার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

    রাজ্য শিশু অধিকার সংরক্ষণ কমিশন (KSCPCR) এ ঘটনায় স্বতঃস্ফূর্ত মামলা (suo motu case) গ্রহণ করেছে এবং জেলা প্রশাসনের কাছে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট তলব করেছে। জেলা শিশুরক্ষা কর্মকর্তাও আলাদা করে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

    ঘটনার পর স্থানীয় মানুষজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, “একটি মেয়ে দীর্ঘদিন গর্ভবতী থেকেও স্কুলের নজরে আসেনি—এটা অগ্রহণযোগ্য অবহেলা।” শিশু অধিকার কর্মীদের বক্তব্য, শুধুমাত্র কয়েকজনকে স্থগিত করলেই দায়িত্ব শেষ নয়, বরং রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মানসিক পরামর্শ এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করাই এখন সবচেয়ে জরুরি।

    রাজ্য শিশু অধিকার সংরক্ষণ কমিশন (KSCPCR) ঘটনাটিকে সু মটো নোটিস নিয়ে জেলা কর্তৃপক্ষের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে। জেলা শিশুরক্ষা ইউনিট পৃথকভাবে অভিযোগ নথিভুক্ত করে ভুক্তভোগীর জন্য আইনি সহায়তা, মনোসামাজিক পরামর্শ ও নিরাপদ আশ্রয় সংক্রান্ত ব্যবস্থা সমন্বয় করছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নবজাতককে নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং মায়ের জন্য রক্তস্বল্পতা ও সংক্রমণ-ঝুঁকি মোকাবিলায় চিকিৎসা চলছে।

    স্থানীয়দের প্রশ্ন—একটি আবাসিক প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কাউন্সেলিং ও মেয়েদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা সেশন থাকলে এমন ঘটনা গোপনে এগোতে পারত কি? অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের যৌথ দাবি, ক্যাম্পাসে সিসিটিভি নজরদারি জোরদার করা, অভিযোগ জানানোর গোপন চ্যানেল চালু রাখা, এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য বাধ্যতামূলক মাসিক স্বাস্থ্য-স্ক্রিনিংয়ের সঙ্গে আস্থা-ভিত্তিক রিপোর্টিং ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়; শিক্ষক-কর্মীদের POCSO-সংবেদনশীলতা প্রশিক্ষণ, হোস্টেলে বহিরাগত সামাজিক কর্মীর নিয়মিত ভিজিট, এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ২৪x৭ হেল্পলাইন সক্রিয় রাখাও অপরিহার্য।

    পুলিশ জানিয়েছে, ফরেনসিক মেডিক্যাল পরীক্ষা, ঘটনার পুনর্গঠন ও বয়ান রেকর্ডিং সম্পন্ন হওয়ার পর দ্রুত চার্জশিট দাখিলের প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রশাসনের আশ্বাস, ভুক্তভোগী ও নবজাতকের পরিচয় গোপন রেখে আইনের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

    বহু শিশু অধিকার সংগঠনের বক্তব্য, গ্রামীণ কর্নাটকে কিশোরীদের ওপর যৌন সহিংসতা ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মাতৃত্বের ঝুঁকি এখনও উদ্বেগজনক। তাই স্কুলভিত্তিক সচেতনতা কর্মসূচি কেবল গর্ভধারণ পরীক্ষা নয়; সম্মতি-শিক্ষা, নিরাপদ পরিবেশ, এবং নির্যাতনের প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিতকরণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। একই সঙ্গে, তথ্য গোপনকারী পরিবার বা সহপাঠীদের প্রতি শাস্তিমূলক নয়, সহানুভূতিপূর্ণ কাউন্সেলিং-কেন্দ্রিক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, যাতে ভবিষ্যতে ভুক্তভোগীরা ভয় ছাড়াই সামনে আসতে পারে।

    এই মর্মান্তিক ঘটনার পর আবারও সামনে এল দেশের আবাসিক স্কুলগুলিতে কিশোরীদের নিরাপত্তার দুর্বলতা। প্রশাসনের উপর চাপ তৈরি হয়েছে যাতে শুধু অপরাধীর শাস্তিই নয়, ভবিষ্যতে আর এমন ঘটনা এড়াতে কাঠামোগত সংস্কার আনা হয়।
  • Link to this news (আজকাল)