মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পরে রাজ্য মন্ত্রিসভার একটি বৈঠকেই ‘দুর্গাঙ্গন’ তৈরির প্রস্তাব পাশ করেছিল নবান্ন। তার জন্য একটি ট্রাস্টও তৈরি করেছে রাজ্য, যার মাথায় রয়েছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, শুক্রবার সংশ্লিষ্ট একটি বৈঠকে দুর্গাঙ্গন নিয়ে সবিস্তার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য। সূত্রের দাবি, দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের মতো এই দুর্গাঙ্গন তৈরিতে সরাসরি অর্থ ব্যয় করবে না রাজ্য। বরং সেই দায়িত্ব থাকবে ট্রাস্টের উপরেই।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ট্রাস্ট এই দুর্গাঙ্গন তৈরির টাকা জোগাড় করবে। প্রয়োজনে ‘কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি’ বা সিএসআরের আওতায় অর্থ সংগ্রহ করা হতে পারে। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইনি পথ তৈরি করেই কাজ শুরু করা হবে। নিউটাউন এলাকায় হিডকো জমি চিহ্নিত করবে। ট্রাস্ট-ই তা কিনে নেবে। নির্মাণ কাজ সরাসরি না করলেও, তার তত্ত্বাবধানে থাকবে হিডকোই। তবে পর্যবেক্ষক শিবিরের একাংশের বক্তব্য, সামাজিক কোনও কাজ যা সরাসরি আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের সহযোগিতা করে, তেমন ক্ষেত্রে সিএসআর হয়ে থাকে সাধারণত। বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা সেই সিএসআর করলে আয়করে কিছু ছাড়ও পেয়ে থাকে। তাই দুর্গাঙ্গন নির্মাণে শেষপর্যন্ত সিএসআর যুক্ত হলে তা যুক্তিযুক্ত হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। এ দিনের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পর এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্কও শুরু হয়ে গিয়েছে।
যদিও রাজ্য সরকারের অন্দরের ব্যাখ্যা, দুর্গাঙ্গন পরিকল্পনার নেপথ্যে ধর্মীয় যোগের তত্ত্ব না রাখাই ভাল। কারণ, দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো যে আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তকমা দিয়েছে, এই পরিকল্পনা তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত।প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, দুর্গাপুজোর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, শহর কলকাতার পুজো-ঐতিহ্য, তার শৈল্পিক উৎকর্ষ, সাংস্কৃতিক গুরুত্ব ইত্যাদি তুলে ধরা হবে। বিপুল সংখ্যক মানুষের পরিশ্রম কী ভাবে এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে, সাধারণকে জানানো হবে তা-ও। পাশাপাশি, একটি সংগ্রহশালায় দুর্গাপুজোর শৈল্পিক নানা বৈশিষ্ট (মণ্ডপ, প্রতিমা, আলো, সাজসজ্জা ইত্যাদি) তুলে ধরা হবে। বিদেশি পর্যটকদের কাছে এইদুর্গাঙ্গন যাতে একটি গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে, তা-ও নিশ্চিত করা হবে। সরকারি মতে এই প্রকল্প একটি সাংস্কৃতিক চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার কথা।