পুজোর অনুদানে কয়েকশো কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ মাসকুলার ডিস্ট্রফির মতো বিরল রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসার পরিকাঠামো গড়তে রাজ্য কেন কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে যন্ত্র কিনতে পারছে না, সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনমের পর্যবেক্ষণ, ‘‘পুজোয় অনুদান দিতে কোটি-কোটি টাকা খরচ করলেও ৩০ লক্ষ টাকার একটি যন্ত্র কেনার সময় অর্থ বরাদ্দ করতে নারাজ সরকার।’’ এই মামলায় প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, পরবর্তী শুনানি ১১ সেপ্টেম্বর। সে দিন এই মামলায় আদালতের যত নির্দেশ ছিল তার তারিখ অনুযায়ী কার্যকরী অংশের সঙ্কলন পেশ করতে হবে রাজ্যকে।
মাসকুলার ডিস্ট্রফি-তে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করে। এই রোগে আক্রান্তদের সুবিধার্থে বিভিন্ন নির্দেশের আর্জিও জানায় তারা। অতীতে এই মামলার শুনানিতে রাজ্যকে এই রোগে আক্রান্তদের বিশেষ পরিচয়পত্র দেওয়ার পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কোর্টের নির্দেশ ছিল, মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে আবেদনকারীদের তথ্য যাচাই করে এই রোগীদের পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া সরলীকরণ করতে হবে। এই রোগীদের মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা বাড়িয়ে ৫০০০ টাকা করা, কলকাতা পুলিশ হাসপাতালে মাসকুলার ডিস্ট্রফি ও অন্যান্য বিরল রোগে আক্রান্তদের জরুরি চিকিৎসার জন্য পাঁচটি আইসিইউ শয্যা সংরক্ষণ, হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা, বাইপ্যাপ যন্ত্র এবং ঘুমের প্রকৃতি বিশ্লেষণ যন্ত্র স্থাপন করার ক্ষেত্রেও রাজ্যের থেকে রিপোর্ট তলব করে আদালত।
বৃহস্পতিবার কোর্টে জানা যায় যে ঘুমের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করার যন্ত্র বসানো হয়নি। সেই প্রসঙ্গেই অর্থ বরাদ্দের কথা তুলে রাজ্যের আইনজীবী জানান যে এই যন্ত্রের দাম প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। তারপরেই প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম বলেন, ‘‘ক্লাবগুলিকে দুর্গা পুজো অনুদান দিতে কত টাকা খরচ করছে রাজ্য?’’ প্রসঙ্গত, এর আগের শুনানিতে রাজ্যের অর্থসচিব এবং স্বাস্থ্যসচিবকে ১৫ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু রাজ্য কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করেনি দেখে রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘রাজ্য এই বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না। নির্দেশ অবজ্ঞা করলে পরবর্তীতে আদালতে অবমাননার আইনে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করতে বাধ্য হবে কোর্ট।’’ সম্প্রতি এই মামলার শুনানিতে এসএসকেএম হাসপতালের বিরল রোগ বিভাগের নোডাল অফিসার জানিয়েছেন, সপ্তাহে এক দিনের পরিবর্তে দু’দিন বিরল রোগের ক্লিনিক চালু করার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা এবং তার জন্য কর্মী সংখ্যা বাড়ানোর আবেদনও করা হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরে।