• হাসপাতালে মুখ দেখিয়েই নিজস্ব চেম্বার
    আনন্দবাজার | ৩০ আগস্ট ২০২৫
  • পর পর দোকান, এক তলা-দোতলা বাড়ি। কোনওটি ওষুধের দোকান, কোনওটি আবার ডায়াগনস্টিক সেন্টার। তবে প্রত্যেকটিতেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে ‘ডক্টরস চেম্বার’। রোগীদের ভিড় উপচে পড়ছে। বিভিন্ন জেলার মেডিক্যাল কলেজ থেকে কয়েক মিনিটের দূরত্বেই গড়ে উঠেছে ‘হাসপাতাল পাড়া’!

    সেখানেই রমরমিয়ে ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিস’ করছেন এক দল চিকিৎসক। যাঁদের অধিকাংশই স্থানীয় বা পার্শ্ববর্তী জেলার মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে যুক্ত। প্রশ্ন হল, সকাল থেকে কী ভাবে বাইরের চেম্বারে রোগী দেখছেন ওই চিকিৎসকেরা? সহকর্মীদের অভিজ্ঞতা, কেউ হাসপাতালে গিয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা দিয়ে বেরিয়ে আসছেন। কেউ আবার দিনের যে কোনও একটা সময়ে গিয়ে হাজিরা দিয়ে নিয়ম রক্ষা করছেন। আবার কেউ কেউ দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকছেন।

    হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপস্থিতির বিষয়ে বারবার সতর্ক করেছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি)। নির্দেশ রয়েছে, প্রত্যেককে ‘আধার এনেবল্ড বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম’ (এইবিএএস)-এর মাধ্যমে হাজিরা দিতে হবে। আগে আঙুলের ছাপ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও, পরে তা পরিবর্তন করেছে ‘এনএমসি’। এখন মুখমণ্ডলের ছবির (ফেস রিকগনিশন) মাধ্যমে হাজিরা দিতে হয়। অভিযোগ, রাজ্যের অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। কেউ সকাল ১০টা নাগাদ একবার হাসপাতালে এসে নিয়ম রক্ষা করে বেরিয়ে গিয়ে, আর ফিরছেন না। কেউ আবার সকালে একবার হাসপাতাল চত্বরে এসে মোবাইলে ‘ফেস রিকগনিশন’ করে বাইরে চেম্বারে চলে যাচ্ছেন।

    কিন্তু ডিউটি আওয়ার্স তো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা। তা হলে কী ভাবে এই বেনিয়ম সম্ভব? শহর ও জেলার বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ‘এনএমসি’-র নিয়মানুযায়ী দিনে যে কোনও সময় এক বার ‘অ্যাটেনডেন্স’ দিতে হয়। জিপিএস-র মাধ্যমে সেটি হাসপাতাল চত্বর কি না তা বোঝা যায়। এক শ্রেণির চিকিৎসক সেই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছেন। ফলে তিনি আদৌ হাসপাতালে কাজ করলেন কি না, কিংবা বিকেল ৪টার আগেই বেরিয়ে গিয়েছেন কি না তা বোঝার উপায় নেই ওই ব্যবস্থায়।

    রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক-চিকিৎসক থেকে শুরু করে রেসিডেন্ট ডক্টর, টিউটরদের একাংশের উপস্থিতি একবারে শূন্য বা অনিয়মিত বলে অভিযোগ তুলেছে খোদ ‘এনএমসি’। গত জুলাইয়ে হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বাকি সমস্ত মেডিক্যাল কলেজকে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠিয়েছিল ‘এনএমসি’। চিঠিতে জানানো হয়েছিল, ‘এইবিএএস’ অনুযায়ী চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির বিষয়টি দেখা গিয়েছে। যেমন, রামপুরহাট, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের প্রতিটি বিভাগে সমস্ত স্তরের চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে ঘাটতির কথা বলা হয়েছে। আবার, কোনও মেডিক্যাল কলেজে কোনও চিকিৎসক মাসে মাত্র ১০ দিন, কেউ ১৬ দিন উপস্থিত রয়েছেন বলে দেখা গিয়েছে। কারও আবার গোটা মাসে উপস্থিতি শূন্য।

    উপস্থিতি-সহ পরিষেবা ও পরিকাঠামো ঘাটতির যে সমস্ত বিষয় চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলি শোধরানো না হলে আগামী দিনে সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এমবিবিএস পাঠ্যক্রমের আসন পুনর্নবীকরণে সমস্যা হবে বলেও জানিয়েছিল ‘এনএমসি’। এমনকি, জুলাইয়ে স্বাস্থ্য দফতরের দুই শীর্ষ কর্তা এ নিয়ে কথা বলতে দিল্লি গিয়েছিলেন। তবু বদল হচ্ছে না অনিয়মের চিত্রটা। এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, ‘‘চিকিৎসকেরা নিয়ম মেনে আসছেন কি না, বা নিয়মিত উপস্থিত থাকছেন কি না, তা দেখার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও।’’ কিন্তু আদৌ কি তা হচ্ছে?
  • Link to this news (আনন্দবাজার)