• ঠিক কিভাবে জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়েছিল ভারত? এনডিটিভি ডিফেন্স সামিটে প্রকাশ্যে এল অপারেশন সিঁদুরের আরও নতুন ভিডিও! ...
    আজকাল | ৩০ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: নতুন দিল্লিতে এনডিটিভি ডিফেন্স সামিটে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এল ভারতীয় বায়ুসেনার গোপন সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর বিস্তারিত চিত্র। জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এ  সংঘটিত ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষ নিহত হওয়ার পরপরই এই অভিযান শুরু হয়েছিল। উপবায়ুসেনা প্রধান এয়ার মার্শাল নর্মদেশ্বর তিওয়ারি সামিটে বলেন, এটি ছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা আবারও প্রমাণ করেছে যে ভারতীয় বায়ুসেনা দেশের প্রকৃত তরবারি। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে এই অভিযানের মাধ্যমে শুধু জঙ্গি সংগঠনগুলির পরিকাঠামোই ভেঙে দেওয়া হয়নি, পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্রের আসল মুখও উন্মোচিত হয়েছে।

    অভিযানে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে দেওয়া হয়েছিল দুটি উচ্চমূল্যের লক্ষ্য। একটি ছিল মুরিদকে, যেখানে অবস্থিত লস্কর-ই-তইবার সদর দপ্তর। এটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অপর লক্ষ্য ছিল বাহাওয়ালপুর, যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার ভেতরে এবং সেখানে রয়েছে জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান কার্যালয়। একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি সাতটি লক্ষ্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে অর্পিত হয়েছিল। পরিকল্পনার ক্ষেত্রে প্রতিটি লক্ষ্যকে ভাগ করা হয়েছিল একাধিক নিখুঁত ‘এম পয়েন্টে’, যাতে আঘাত সঠিক জায়গায় পৌঁছায় এবং বেসামরিক ক্ষতি বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে। এয়ার মার্শাল তিওয়ারি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা প্রতিটি অস্ত্রকে কাজে লাগিয়েছি। একটি গুলিও অপচয় করা হয়নি।”

    মুরিদকে আক্রমণে প্রধান লক্ষ্য ছিল প্রশাসনিক ব্লক এবং সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতার বাসভবন। প্রথমদিকে ড্রোন ফুটেজে দেখা যায় ভবনের ছাদে কেবল ছোট ছোট গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে অনেকের সন্দেহ জাগলেও পরে স্থানীয় সূত্রে পাওয়া ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ভবনের ভেতরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে এবং ভেতরের কাঠামো কার্যত ভেঙে পড়েছে। বাহাওয়ালপুরে আরও বৃহৎ পরিসরে আঘাত হানা হয়। সেখানে প্রশাসনিক ব্লক, নেতৃত্বের কোয়ার্টার এবং ক্যাডারদের আবাসস্থলসহ মোট পাঁচটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। নিখুঁতভাবে চালানো দুটি অস্ত্র একাধিক তলা ভেদ করে ভেতরে থাকা কমান্ড সেন্টার ধ্বংস করে দেয়। ভারতীয় বায়ুসেনা সুনিপুণ কৌশলে প্রতিটি আঘাতকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোকে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।

    অভিযানের পর আরও এক গুরুত্বপূর্ণ দিক সামনে আসে। নিহত জঙ্গি নেতাদের জানাজায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সরাসরি উপস্থিত ছিলেন। পাঞ্জাব কোর কমান্ডার, চিফ সেক্রেটারি এবং প্রাদেশিক পুলিশের ডিজিপি পর্যন্ত সেখানে গিয়ে শোক প্রকাশ করেন। এয়ার মার্শাল তিওয়ারির ভাষায়, এটাই প্রমাণ করে পাকিস্তানি রাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদকে সরাসরি মদত দিচ্ছে। ভারতের পক্ষ থেকে বারবার যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, এই ঘটনাই সেটিকে বিশ্বমঞ্চে প্রমাণের মতো করে তুলে ধরে। এই হামলার পর পাকিস্তানের ভেতরে রাজনৈতিক অস্বস্তি দেখা দেয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে তাদের উপর কূটনৈতিক চাপ বাড়তে থাকে।

    ভারতের এই সামরিক অভিযানে পাকিস্তান বাধ্য হয় আন্তর্জাতিক মহলের কাছে মধ্যস্থতার আবেদন জানাতে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কূটনৈতিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। ১০ই মে সন্ধ্যার মধ্যেই দুই দেশের মধ্যে স্থল, জল ও আকাশপথে শত্রুতা থামানোর ব্যাপারে ঐকমত্য গড়ে ওঠে। ভারতীয় আঘাত এতটাই প্রবল ছিল যে পাকিস্তান দ্রুত যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটতে বাধ্য হয়। এর মাধ্যমে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা যায় যে ভারত প্রয়োজনে প্রতিরক্ষার বাইরে গিয়েও শত্রুপক্ষকে তার ঘাঁটিতে প্রবল আঘাত হানতে সক্ষম।

    অপারেশন সিঁদুরের  প্রকাশ্যে আসা তথ্য দেখিয়ে দিল যে ভারতীয় বায়ুসেনা শুধু সীমান্ত রক্ষাতেই নয়, প্রয়োজনে আক্রমণাত্মক অভিযানে অত্যন্ত দক্ষতা ও শক্তি প্রদর্শন করতে পারে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভিযান ভারতের সামরিক কৌশলে এক মোড় পরিবর্তনের মুহূর্ত। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে ভারত আর কেবল প্রতিরক্ষার ভূমিকায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং আক্রমণাত্মক প্রয়াসের মাধ্যমেও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। একইসঙ্গে এটি পাকিস্তানের জন্যও এক কড়া বার্তা যে ভারতীয় ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিটি পদক্ষেপের জবাব দেওয়া হবে বহু গুণ শক্তি দিয়ে।

    এয়ার মার্শাল তিওয়ারি এই অভিযানের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “ছবিই প্রমাণ করে তার সাফল্য।” তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট যে বায়ুসেনা ভবিষ্যতে আরও আধুনিক প্রযুক্তি এবং নিখুঁত আঘাতের ক্ষমতা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অপারেশন সিঁদুর শুধু এক সামরিক অভিযানের নাম নয়, এটি ভারতের আত্মবিশ্বাস, কৌশলগত পরিপক্বতা এবং রাষ্ট্রসুরক্ষায় দৃঢ় অবস্থানের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
  • Link to this news (আজকাল)