রত্নার সঙ্গে ডিভোর্স খারিজ হবার পর প্রতিক্রিয়া শোভনের...
আজকাল | ৩০ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: শোভন-রত্নার বৈবাহিক টানাপড়েন আরও এক ধাপ জটিল হয়ে উঠল। দীর্ঘ আট বছর ধরে চলা বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা খারিজ করল আলিপুর আদালত। শুক্রবার আদালতের রায়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল, শোভন চট্টোপাধ্যায় ও রত্না চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর নয়। একই সঙ্গে রত্নার পক্ষ থেকে করা সংসার টিকিয়ে রাখার আবেদনও আদালত বাতিল করেছে। ফলে আপাতত আইনত স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই রয়ে গেলেন শোভন ও রত্না। তবে শোভন ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, হাইকোর্টে যাবেন তিনি।
আদালতের রায় ঘোষণার পর দেওয়া সাক্ষাৎকারে শোভন বলেন, “এটা এক অদ্ভুত রায়। আমি মনে করি ডিভোর্স চাওয়ার যথেষ্ট কারণ ও প্রমাণ আমি আদালতে দিয়েছিলাম। তবু রায় যেহেতু এসেছে, সেটি নিয়ে বিশেষ মন্তব্য করতে চাই না। তবে বাস্তব হল, ডিভোর্স ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প নেই। সামাজিকভাবে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে অনেক আগে, এখন কেবল আইনি প্রক্রিয়াই বাকি।” বৈশাখীর প্রসঙ্গ টেনে শোভনের সংযোজন, “আমি যখন হাত ধরি, তখন ছাড়ি না। বৈশাখীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক হৃদয়ের, সেটা ভাঙার ক্ষমতা কোনও শক্তির নেই।”
অন্যদিকে, রত্না চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “আট বছর ধরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছি আমার সন্তানদের জন্য। আজকের রায় সমাজের জন্য বড় বার্তা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মহিলারা যে লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন, আমি তারই দৃষ্টান্ত।” দম্পতির ছেলে আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আজকের সিদ্ধান্ত শুধু আমার মায়ের জয় নয়, বাংলার ও দেশের বহু নারীর লড়াইকে অনুপ্রেরণা দেবে। বাবাকে বলছি, এখনও দেরি হয়নি, ফিরে আসুন।”
শোভনের সঙ্গী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য মন্তব্য করেছেন ভিন্ন সুরে। তাঁর বক্তব্য, “খাতায় কলমে রত্না এখনও শোভনের স্ত্রী। তবে আগামীকাল কী হবে, সেটা হাইকোর্ট নির্ধারণ করবে। আমাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে লড়াইয়ের ভিতরে দাঁড়িয়েই। এই লড়াই-ই আমাদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে।”
সব মিলিয়ে আদালতের রায়ের পর চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দ্বন্দ্ব নতুন মোড় নিল। এবার নজর হাইকোর্টের সিদ্ধান্তে। আইনজীবী ও জীবনের লড়াইয়ের ৮ বছরের পরিপ্রেক্ষিতে আলিপুর আদালতের এই রায়ে তিনটি সম্পর্কের জটিলতা বিচারব্যবস্থার সামনে স্পষ্ট হলো। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য স্পষ্ট: “তাতে আমি স্টিক করে আছি... ডিভোর্স ডিক্রি ছাড়া এখানে কোনও বিকল্প নেই... কিন্তু সম্পর্ক তো ভাঙেনি; বৈশাখীর সঙ্গে আমার হৃদয়ের বন্ধন ভাঙার নয়।”
এই অবস্থায় রত্না চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, তার দীর্ঘ লড়াই শুধুমাত্র নিজের প্রশান্তির জন্য নয়—সেটি পুরো সমাজের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা। “পুরুষ-শাসিত সমাজে মহিলারা নির্যাতিত হন... আমি সেই লড়াইটা দিতে পেরেছি,”—এই কথাগুলো শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং একটি সামাজিক প্রতিফলন হিসেবেই তিনি দেখেন । তিনি আরও বলেন, তার লড়াই শুধুমাত্র নিজের লড়াই নয়, তার সঙ্গে তার শ্বশুর- এবং বাপের বাড়ি, নির্ভরযোগ্য আইনজীবীরা ছিল ।
শোভনের সঙ্গে পরস্পর-বন্ধনের পার্থক্য স্পষ্ট—শোভনের কাছে বৈশাখী একটি নৈতিক ও আবেগঘন সঙ্গী; অন্যদিকে রত্না সমাজের কাছে এক জীবন্ত প্রতীক—‘হোক-লড়াই-ভিডম্বনা দেখিয়ে’, তবে ধারাবাহিক রূপে সমাজকে অনুপ্রাণিত করেছেন । এর ফলে আদালতের রায় শুধু একটি দাম্পত্যের টানাপোড়েন নয়, বরং একটি বৃহত্তর সামাজিক প্রশ্ন—‘নারীদের নিজের অধিকার ও সম্মানের লড়াই’—কে সামনে এনেছে।
এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্টে যাওয়ার শোভনের ইচ্ছা, এবং সেই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন—সব মিলিয়ে আগামী সময় আরও আলোচনার জন্ম দেবে। আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি, এই তিন ব্যক্তির অন্তর্মূল সম্পর্ক, আবেগ, ও সামাজিক প্রত্যাশার যোগাযোগ বোঝা প্রয়োজন—যা এই মামলাকে শুধু আদালতের মঞ্চে সীমাবদ্ধ রাখে না, বরং সামাজিক আত্মরক্ষার এক অনন্য দিক উন্মোচন করে।