• জিএসটি হ্রাসে রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কা, আট বিরোধী-শাসিত রাজ্যের একযোগে ক্ষতিপূরণের দাবি কেন্দ্রের কাছে 
    আজকাল | ৩১ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:  জিএসটি হারে সংস্কারের ফলে বিপুল রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়ে আট বিরোধী-শাসিত রাজ্য একযোগে ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছে। হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, কেরল, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা ও পশ্চিমবঙ্গ—এই আটটি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীতে বৈঠক করে সর্বসম্মতভাবে জানিয়েছেন, কর হার কমানোয় ভোক্তারা অবশ্যই স্বস্তি পাবেন, তবে রাজ্যগুলির উন্নয়নমূলক ব্যয় মারাত্মকভাবে সংকুচিত হবে যদি কেন্দ্র আর্থিক সুরক্ষা না দেয়।

    প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি  স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে ঘোষণা করেছিলেন, দীপাবলির সময় দেশবাসীর জন্য বিশেষ “উপহার” হিসেবে জিএসটি-তে ছাড় আসছে। এর পরদিন অর্থ মন্ত্রক প্রস্তাব দেয় ১২% স্ল্যাবকে ৫% এর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া এবং একাধিক পণ্যকে ২৮% স্ল্যাব থেকে নামিয়ে ১৮% স্ল্যাবে আনার। বর্তমানে জিএসটি চারটি হারে আরোপিত হয়—৫%, ১২%, ১৮% ও ২৮%।

    কিন্তু রাজ্যগুলির বক্তব্য, এই স্ল্যাব সংস্কারে রাজস্ব ঘাটতি বছরে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ২ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তাদের মতে, বর্তমান জিএসটি রাজস্বের ১৫-২০% পর্যন্ত হ্রাস পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। উপরন্তু ক্ষতিপূরণ সেস সম্পূর্ণভাবে জিএসটি কাঠামোর সঙ্গে না মেশানোর ফলে অতিরিক্ত ক্ষতি হবে। এই অবস্থায় রাজ্যগুলির আর্থিক স্থিতি রক্ষার জন্য ন্যূনতম পাঁচ বছরের ক্ষতিপূরণ প্রয়োজন, যেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষকে বেস ইয়ার ধরা উচিত।

    সম্মিলিত বিবৃতিতে আট রাজ্যের অর্থমন্ত্রী জানান—“এই ধাক্কা রাজ্যগুলি একা সামলাতে পারবে না। ফলে উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক ব্যয় বড়সড়ভাবে কেটে ফেলতে হবে। তাই হারে সংস্কার হলে তা অবশ্যই পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা সাপেক্ষে হতে হবে।” তারা আরও দাবি জানান, যেকোনো করছাড়ের সুফল যেন সরাসরি ভোক্তার কাছে পৌঁছায় এবং ‘পাপ’ বা বিলাসবহুল দ্রব্যের উপর অতিরিক্ত কর আদায় পুরোপুরি রাজ্যগুলির হাতে হস্তান্তর করতে হবে।

    ঝাড়খণ্ডের অর্থমন্ত্রী রাধা কৃষ্ণ কিশোর বলেন, “এটা শুধু আট রাজ্যের দাবি নয়। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিও ক্ষতিপূরণ চায়, কিন্তু তারা প্রকাশ্যে বলতে পারছে না। আমরা গোটা দেশের স্বার্থেই বলছি। আমাদের প্রস্তাব গণতান্ত্রিক ও সামাজিক স্বার্থরক্ষাকারী।” তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ৩ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে যদি রাজ্যগুলির বক্তব্য শোনা না হয় তবে ঝাড়খণ্ড গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হবে। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম. কে. স্টালিন স্পষ্ট বলেন—“রাজস্ব রক্ষা ছাড়া জিএসটি সংস্কার মানুষের কাজে লাগবে না। কর কমানোয় ভোক্তারা লাভবান হবেন ঠিকই, তবে তা রাজ্যের কল্যাণমূলক কর্মসূচি ও অবকাঠামো প্রকল্পের খরচে আঘাত আনতে পারবে না।”

    কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া জিএসটি-কে “যৌথ দায়িত্ব” আখ্যা দিয়ে বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্যকে সহযোগী ফেডারালিজমের চেতনায় একসঙ্গে চলতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্র ইতিমধ্যেই কর্ণাটকের তহবিলে বৈষম্য করছে, যার ফলে বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হচ্ছে। “এখন যদি জিএসটি আয় আরও কমে, তবে তা সরাসরি উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক প্রতিশ্রুতিগুলিকে বিপন্ন করবে,” তিনি সতর্ক করেন।

    তেলেঙ্গানার অর্থমন্ত্রী ভাট্টি বিক্রমার্কা মল্লু জানান, প্রস্তাবিত পরিবর্তনে রাজ্যের প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে, যা কল্যাণমূলক ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে গুরুতর প্রভাব ফেলবে। কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশও এই রাজ্যগুলির দাবিকে “সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত” বলেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, কেন্দ্রের নিজস্ব গবেষণা সংস্থা, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড পলিসি (NIPFP)-এর সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র এই দাবিকে সমর্থন করছে। সবমিলিয়ে আট রাজ্য পরিষ্কার জানিয়েছে—জিএসটি সংস্কার স্বাগত হলেও রাজস্ব সুরক্ষা ছাড়া তা কার্যকর নয়। তাদের বার্তা একটাই—“কেন্দ্রকে অবশ্যই রাজ্যগুলিকে আস্থায় নিতে হবে, নইলে ফেডারেল কাঠামোর আর্থিক স্থিতি ভেঙে পড়বে।”
  • Link to this news (আজকাল)