• ব্যক্তিগত আয়করের দাপট, কর্পোরেট করকে ছাড়িয়ে গেল ইতিহাসে প্রথমবার
    আজকাল | ৩১ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের ইতিহাসে এবার প্রথমবার কর্পোরেট করকে ছাপিয়ে ব্যক্তিগত আয়কর শীর্ষস্থানে পৌঁছল। ইকনমিক টাইমস-এ প্রকাশিত জেএম ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনাল সিকিউরিটিজ (JMFIS)-এর এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রবণতা দেশের কর কাঠামো এবং অর্থনীতির এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট প্রত্যক্ষ করের মধ্যে ব্যক্তিগত আয়করের ভাগ ২০১৪ অর্থবর্ষে (FY14) ছিল ৩৮.১%। দশ বছরে সেই হার ২০২৪ অর্থবর্ষে (FY24) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩.৪%। অন্যদিকে একই সময়ে কর্পোরেট করের অংশ ৬১.৯% থেকে নেমে এসেছে ৪৬.৬%-এ। ব্যক্তিগত আয়করদাতার সংখ্যা গত দশকে দ্রুত বেড়েছে। ২০১৪ অর্থবর্ষে যেখানে রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ছিল ৩.০৫ কোটি, ২০২৪-এ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৯৭ কোটিতে। শুধু তাই নয়, রিটার্ন দাখিল না করেও যারা ট্যাক্স ডিডাক্টেড অ্যাট সোর্স (TDS)-এর মাধ্যমে কর দেন, তাদের অন্তর্ভুক্ত করলে করদাতার সংখ্যা দাঁড়ায় ৯.৯২ কোটিতে—যা এক দশকে প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি।

    টিডিএস সংগ্রহ ২০১৪ অর্থবর্ষে যেখানে ছিল ২.৫ ট্রিলিয়ন টাকা, ২০২৪-এ তা বেড়ে হয়েছে ৬.৫ ট্রিলিয়ন টাকা। একইভাবে অগ্রিম কর প্রদানের অঙ্ক ২.৯ ট্রিলিয়ন টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৮ ট্রিলিয়ন টাকায়। বর্তমানে টিডিএস ও অগ্রিম কর মিলিয়ে মোট প্রত্যক্ষ করের অর্ধেকেরও বেশি আসে। জেএম ফিনান্সিয়ালের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আয়কর রিটার্নে ঘোষিত বেতনের অঙ্ক ২০১৪ অর্থবর্ষে ছিল ৯.৮ ট্রিলিয়ন টাকা। ২০২৩ অর্থবর্ষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫.২ ট্রিলিয়ন টাকায়। বার্ষিক বৃদ্ধির হার ১৫%। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যক্তিগত আয়করের সংগ্রহও বেড়েছে—২০১৪-র ২.৪ ট্রিলিয়ন টাকা থেকে ২০২৩-এ ৮.৩ ট্রিলিয়ন টাকায়।

    যদিও আয়করের সংখ্যা ও সংগ্রহ বেড়েছে, মাটির বাস্তবতা ভিন্ন। কর্পোরেট ও উচ্চ বেতনের ক্ষেত্রগুলিতে আয়ের পরিমাণ বাড়লেও সাধারণ মজুরির প্রকৃত মূল্য বাড়েনি। দ্য হিন্দু-র একটি বিশ্লেষণে পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (PLFS)-এর তথ্য ব্যবহার করে দেখা হয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয় করে দেখা যায় ২০২৪ সালের জুন ত্রৈমাসিকে শ্রমিকদের বাস্তব মজুরি ২০১৯ সালের জুন ত্রৈমাসিকের তুলনায় ১.৭% কম। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত চাকরিজীবী, খণ্ডকালীন শ্রমিক এবং স্বনিযুক্তরা। অর্থাৎ, গড় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তেমন বাড়েনি।

    অন্যদিকে, অর্থনীতির আনুষ্ঠানিকীকরণের দিকেও পরিবর্তন এসেছে। JMFIS-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সক্রিয় জিএসটি করদাতার সংখ্যা ছিল ১.২৪ কোটি, যা ২০২৪-এ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৪৭ কোটিতে। ফলে বহু পূর্বে অ-নিবন্ধিত ব্যবসা এখন জিএসটির আওতায় আসছে। এই পরিবর্তন ভারতের কর কাঠামোয় এক নতুন বাস্তবতা তুলে ধরছে। কর্পোরেট করের চেয়ে ব্যক্তিগত আয়কর এখন রাজস্বের বড় উৎস হলেও বাস্তব আয় বৃদ্ধির অভাবে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ ক্রমশ বাড়ছে। রাষ্ট্রের রাজস্বভাণ্ডার ভরলেও শ্রমজীবী মানুষের ভোগক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে—যা অর্থনীতির ভারসাম্যের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
  • Link to this news (আজকাল)