• বাংলা ভাষাভাষীদের আটক প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের...
    আজকাল | ৩১ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করা হচ্ছে কি না—এই গুরুতর অভিযোগ নিয়ে শুক্রবার (২৯ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে স্পষ্ট করতে বলেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, কোনও ভাষাকে বিদেশি পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হলে তা বৈষম্যমূলক এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী হতে পারে।

    West Bengal Migrant Workers Welfare Board নামে একটি সংগঠন জনস্বার্থ মামলা (PIL) দায়ের করে। তাদের অভিযোগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের গত মে মাসে জারি করা এক নির্দেশের পর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলা ভাষাভাষী, বিশেষত মুসলিম শ্রমিকদের আটক করা হচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা বাংলাদেশি নাগরিক। মামলাকারীদের দাবি, শুধুমাত্র ভাষার ভিত্তিতে এই শ্রমিকদের সন্দেহভাজন বিদেশি হিসেবে দেখা হচ্ছে, অথচ তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই বহু বছর ধরে ভারতীয় ভূখণ্ডে বৈধভাবে বসবাস ও কাজ করছেন।

    শুনানিতে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি বলেন, “একটি নির্দিষ্ট ভাষাকে বিদেশি হওয়ার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, এই অভিযোগ গুরুতর। কেন্দ্রকে অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে যে বাস্তবে কী হচ্ছে।” বিচারপতি সুর্যকান্ত পর্যবেক্ষণ করেন, “যাঁরা সীমান্ত পেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন তাঁদের ঠেকানো স্বাভাবিক। কিন্তু যাঁরা বহুদিন ধরে এ দেশে বসবাস করছেন, তাঁদেরকে শুধুমাত্র সন্দেহের বশে তুলে নিয়ে গিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে বাধ্য করা হলে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। আপনারা আমাদের জানাবেন, কোন স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (SOP) অনুসরণ করা হচ্ছে।”

    এছাড়া বিচারপতি বাগচি বলেন, “এখানে জাতীয় নিরাপত্তা, রাষ্ট্রের অখণ্ডতা এবং সম্পদ সংরক্ষণের বিষয় আছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের অভিন্ন ঐতিহ্যও মনে রাখতে হবে। বাংলায় যেমন, তেমনই পাঞ্জাবেও—ভাষা সীমান্তের দুই পাশে এক, কেবল রাজনৈতিক বিভাজনই আমাদের আলাদা করেছে।” সরকারের পক্ষে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে জানান, বাংলা ভাষাভাষীদের প্রতি কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই। সরকার কেবল অবৈধ অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে। তিনি বলেন, নাগরিকদের আটক করার সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ভাষার ওপর নির্ভরশীল নয়। তবে বেঞ্চ তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে SOP জমা দিতে নির্দেশ দেয়, যাতে বোঝা যায় প্রশাসনিকভাবে কীভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

    আদালত মামলাকারীর পক্ষ থেকে করা একটি অন্তর্বর্তীকালীন আবেদনে নোটিস জারি করেছে। ওই আবেদনে দাবি করা হয়েছে, নাগরিকত্ব নির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত না করে কাউকে যেন দেশ থেকে বহিষ্কার করা না হয়। এর মাধ্যমে আদালত কার্যত নির্দেশ দিয়েছে যে, ভাষার ভিত্তিতে বা সন্দেহের বশে কোনো শ্রমিককে অবিলম্বে বিদেশি বলে ঘোষণা করা যাবে না। সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিকদের আটক হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা নির্মাণশ্রমিক, দৈনিক মজুর বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এই ঘটনাগুলি শ্রমজীবী মহলে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি সত্যিই ভাষাভিত্তিক পক্ষপাত চলে, তবে তা কেবল সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন নয়, ভারতের বহুত্ববাদী ঐতিহ্যের বিরুদ্ধেও যায়। সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে এক সপ্তাহের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলেছে। এরপর মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। এই মামলার রায় শুধু আটক শ্রমিকদের ভবিষ্যতের জন্যই নয়, ভারতের ভেতরে ভাষাভিত্তিক পরিচয় ও বৈষম্যের প্রশ্নেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
  • Link to this news (আজকাল)