আজকাল ওয়েবডেস্ক: বয়স মাত্র ৩৯ বছর বছর। শহরের নামী কার্ডিয়াক সার্জন। হাসপাতালে রাউন্ড দিচ্ছিলেন। রোগী দেখতে দেখতেই হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই হাসপাতালের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। মুহূর্তের মধ্যে চরম পরিণতি হল ৩৯ বছরের কার্ডিয়াক সার্জনের।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, মৃত চিকিৎসকের নাম, ডা. গ্রেডলিন রায়। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে চেন্নাইয়ের সবিতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ঘটনাটি ঘটেছে। বুধবার হাসপাতালে রাউন্ড দেওয়ার সময় বুকে ব্যথা হয় তাঁর। কয়েক মিনিটের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন। জানা গেছে, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যু হয়েছে কমবয়সি চিকিৎসকের।
হায়দরাবাদের এক নিউরোলজিস্ট ডা. সুধীর কুমার জানিয়েছেন, ড. গ্রেডলিন রায়ের সহকর্মীরা তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। সিপিআর, টেন্টিং সহ জরুরি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, ইন্ট্রা-এওর্টিক বেলুন পাম্প, এমনকী ইসিএমও দেওয়া হয়েছিল ডা. রায়কে। চিকিৎসকের লেফট মেন আর্টারিতে ১০০ শতাংশ ব্লকেজ ছিল। আপ্রাণ চেষ্টা করেও তাই মৃত্যুর হাত থেকে চিকিৎসককে ফিরিয়ে আনা যায়নি।
চিকিৎসক ডা. সুধীর কুমার আরও জানিয়েছেন, 'এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ইদানিং ৩০-৪০ বছরের তরুণ চিকিৎসকদের মধ্যে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। এই ধরনের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা। চিকিৎসকরা প্রতিদিন ১২-১৮ ঘণ্টা কাজ করেন। অনেক সময় একটানা ২৪ ঘণ্টা বা তারও বেশি। এর জেরে প্রবল মানসিক চাপ পড়ে। অনিয়মিত জীবনযাপন, সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া, ঘুম কম হওয়া, শরীরচর্চার অভাব, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের জন্য দায়ী।'
অতিমারির সময় থেকেই কমবয়সিদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত জুলাই মাসে ন'বছরের ছাত্রী প্রাচী কুমায়াত কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হয়। রাজস্থানের সিকার জেলার দন্ত শহরের একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে। স্কুলে টিফিন পিরিয়ডের ঘণ্টা বাজতেই সহপাঠীদের সঙ্গে বেঞ্চে বসেই খাওয়াদাওয়া শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ব্যাগ থেকে টিফিন বাক্স বের করে বেঞ্চে রাখার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটে বিপত্তি। টিফিন বাক্স খোলার পরেই জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে বেঞ্চের ওপর।
সহপাঠীরা জানিয়েছে, প্রাচীকে কখনও অসুখে ভুগতে দেখেনি তারা। সেদিন কোনও শারীরিক অসুস্থতাও ছিল না তার। স্কুলে এসে রোজের মতো স্বাভাবিক ছিল। খেলাধুলা করেছে। একের পর এক পিরিয়ডে পড়াশোনা করেছে। জ্ঞান হারানোর আগে শারীরিক অসুস্থতার কোনও লক্ষণ তার শরীরে দেখা যায়নি।
জানা গেছে, সহপাঠীদের থেকে প্রাচীর জ্ঞান হারানোর খবর পেয়েই তড়িঘড়ি ছুটে আসেন শিক্ষকরা। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তার রক্তচাপ দ্রুত কমে যাচ্ছে। পালস পাওয়া যাচ্ছে না। শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে তার। এই সবগুলোই আসলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের লক্ষণ।
এদিকে চিকিৎসকদের এমন দাবি মানতে নারাজ ছিলেন প্রাচীর বাবা-মা। সেই হাসপাতাল থেকে প্রাচীকে নিয়ে সিকারের আরও বড় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেন। কিছুক্ষণ পরেই প্রাচীকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টেই প্রাচীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
প্রাচীর বাবা ও মা জানিয়েছেন, ঘটনার তিনদিন আগে থেকেই সামান্য জ্বরে ভুগছিল সে। আর্দশ বিদ্যা মন্দির স্কুলের প্রিন্সিপাল নন্দ কিশোর তিওয়ারি জানিয়েছেন, গত সপ্তাহের শেষ থেকে চলতি সপ্তাহের শুরু পর্যন্ত তিনদিন স্কুলে অনুপস্থিত ছিল প্রাচী। সুস্থ হয়ে মঙ্গলবার স্কুলে এসেছিল। স্কুলে প্রার্থনার সময়েও তাকে চনমনে দেখাচ্ছিল। কোনও অসুস্থতার লক্ষণ শিক্ষক এবং সহপাঠীরা বুঝতে পারেনি। টিফিন খাওয়ার সময়েই হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে সে বেঞ্চে লুটিয়ে পড়ে। তৎক্ষণাৎ তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেই মৃত্যু হয় তার।
এদিকে স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, 'অচৈতন্য অবস্থায় ন'বছরের ছাত্রীটিকে তার স্কুলের শিক্ষকরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল। সে সময় তার রক্তচাপ একেবারে কমে গিয়েছিল। আমরা সিপিআর দিয়েছিলাম। অক্সিজেন, জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ, ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হচ্ছিল। অবশেষে অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে তাকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়।'
চিকিৎসকরা এও জানিয়েছেন, দেড় ঘণ্টা ধরে প্রাচীর চিকিৎসা চলেছে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। তার দেহ ময়নাতদন্ত না করেই নিয়ে যায় পরিবার। তারাও শোকে ভেঙে পড়েছে। তবে হার্ট অ্যাটাকে প্রাচীর মৃত্যু হয়নি বলেই মত চিকিৎসকদের। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। হয়তো আগে থেকেই হার্টের অসুখে ছিল। পরিবারের কেউ লক্ষ করেনি। তাই বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়নি। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।