প্রকৃতির রুদ্ররুপে আচমকাই রাস্তার উপর এসে পড়ল প্রায় ‘আস্ত পাহাড়’, আশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী থাকলেন পর্যটকরা ...
আজকাল | ৩১ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি জেলাগুলিতে চলছে ভারী বৃষ্টিপাত। সেই বৃষ্টির মাঝেই প্রকাণ্ড পাথর পরে বন্ধ হল শিলিগুড়ি–সিকিম জাতীয় সড়ক।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরে প্রবল বৃষ্টিতে শিলিগুড়ি–সিকিম সংযোগকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বার বার অবরুদ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে চলতি মাসের ৮ আগস্ট সিরকিঝোড়া, তারখোলার একাধিক জায়গায় ধসের কারণে রাস্তা বন্ধ ছিল প্রায় ৭ দিন। প্রশাসনের তরফে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মেরামতির কাজ শুরু হয়েছিল। অবশেষে ১৪ আগস্ট থেকে জাতীয় সড়কে যাতায়াত আবার স্বাভাবিক হয়।
কিন্তু সেই ঘটনার রেশ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই বা ১৫ দিন কাটতে না কাটতেই আবারও ধস। বন্ধ হয়ে যায় সেই একই রাস্তা।
ঘটনা সম্পর্কে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত থেকে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় চলছে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত। সেই বৃষ্টির মাঝেই কালীঝোড়াতে জাতীয় সড়কের মাঝেই হুড়মুড়িয়ে পড়েছে প্রকাণ্ড পাথর। তারপর থেকেই যোগযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ। সিকিম যাবার ক্ষেত্রে গরুবাথান, লাভা হয়ে বিকল্প পথ নিতে হচ্ছে গাড়ি চালকদের। সকাল থেকে পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ির লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে। গন্তব্যে পৌঁছতে লাগছে অনেক সময়। পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রশাসনের তরফে এলাকায় যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় নিয়ে আসা হয়েছে অত্যাধুনিক রাস্তা মেরামতির যন্ত্র। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে জোরকদমে।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ধস সরানো পর্যন্ত সিকিমমুখী যানবাহনের জন্য বিকল্প রাস্তা খোঁজা হচ্ছে। পর্যটক ও সাধারণ মানুষকে উৎসাহী হয়ে অকারণে ধসপ্রবণ এলাকায় না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সামনেই পুজো। তার আগে এই পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের। সিকিম ও দার্জিলিংয়ের প্রায় সব হোটেল, হোমস্টে ইতিমধ্যেই বুকিং হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাস্তা বন্ধ থাকায় বহু পর্যটক শেষপর্যন্ত ভ্রমণ বাতিল করতে পারেন বলে আশঙ্কা। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, এই ধস চলতি মরসুমে পর্যটন শিল্পকে বড় ধাক্কা দিতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায় প্রতি বর্ষাতেই কালিঝোড়া, সেবক ও বাগপুল এলাকায় ধস নামায় দিনের পর দিন বন্ধ হয়ে যায় জাতীয় সড়ক। অথচ স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ দেখা যায় না। ফলে প্রতিবছর একই দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয় সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের।
জানা গিয়েছে, সেবক বাগ পুল ও কালিঝোড়ার মাঝামাঝি পাহাড়ি ঢাল থেকে একের পর এক পাথর গড়িয়ে পড়ায় মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যায় গাড়ি চলাচল। এর জেরে রাত থেকেই আটকে পড়েন শতাধিক পর্যটক ও সাধারণ যাত্রী। অন্ধকারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যাত্রীদের মধ্যে। একাধিক পর্যটক গাড়ি ফেলে হেঁটে শিলিগুড়ির দিকে রওনা দেন। তাঁদের বক্তব্য, ধস নামার শব্দ এতটাই তীব্র ছিল যে মনে হচ্ছিল যেন পাহাড় ভেঙে পড়ছে। ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ কর্মীদের ঘটনাস্থলে পাঠায়। শনিবার সকাল থেকে ধস সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু মাটি ও পাথরের পরিমাণ এতটাই বেশি যে কখন রাস্তা সচল হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে পুরো রাস্তাই গাড়ি চলাচলের অযোগ্য। শিলিগুড়ি প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ধস সরানো পর্যন্ত সিকিমমুখী যানবাহনের জন্য বিকল্প রাস্তা খোঁজা হচ্ছে।