আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশ জুড়ে সাইবার প্রতারণা এবং আর্থিক জালিয়াতির কাজে ব্যবহার করার জন্য বেআইনিভাবে মোবাইল ফোনের সিম কার্ড সরবরাহ করতে গিয়ে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হল সদ্য কৈশোর পার করা দুই ভাই। ধৃত ২ যুবকের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে সরকারি এবং বেসরকারি কোম্পানি মিলিয়ে মোট ৩১১ টি চালু সিম কার্ড এবং চারটি কিপ্যাড যুক্ত মোবাইল ফোন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত দুই ভাইয়ের নাম আশিক ইকবাল (১৯) এবং বুরহান শেখ (১৮)। তাদের বাড়ি বেলডাঙা থানার অন্তর্গত মহ্যমপুর -বিলধরপাড়া গ্রামে। শুক্রবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বেলডাঙা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সমিত তালুকদারের নেতৃত্বে সাদা পোশাকের পুলিশের একটি দল দুই ভাইকে ঝুনকা এলাকা থেকে আটক করে। এরপর তল্লাশি চালাতেই তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ ভুয়ো সিম কার্ড। ধৃত দুই যুবক কোথা থেকে এত পরিমাণ সিম কার্ড পেয়েছে পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।
মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার এক আধিকারিক জানান, প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি ধৃত দুই ভাই ঝাড়খন্ড, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে পুরনো জিনিসপত্র কেনাবেচার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ট ছিল। সেই সূত্রেই তারা বিপুল পরিমাণ মোবাইল ফোনের সিম কার্ড হাতে পেয়েছিল। এসডিপিও (বেলডাঙা) উত্তম গড়াই বলেন,' অনেক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী বিভিন্ন অফারে সিম কার্ড নেওয়ার পর সেই অফার শেষ হয়ে গেলে সিম কার্ডটি আর রিচার্জ করেন না। এছাড়াও অনেকে কম দামের কিপ্যাড যুক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার পর ফোনটি নষ্ট হয়ে গেলে সেটি ফেলে দেওয়া বা বিক্রির আগে ফোনের মধ্যে থাকা সিম কার্ডটি 'ডিঅ্যাক্টিভেট' বা নষ্ট করেন না। এই সুযোগ নিয়ে পুরনো জিনিসপত্র কেনা বেচার সঙ্গে জড়িত বহু ব্যক্তি বিহার ,ঝাড়খন্ড এবং উত্তরপ্রদেশের বহু জায়গা থেকে পুরনো ফোন এবং সিম কার্ড জোগাড় করে। এরপর চালু থাকা সিম কার্ডগুলোর হাত বদল হয়ে যায়।' তিনি জানান,'কোনও দোকানে আসল নথি দিয়ে একটি মোবাইল ফোনের সিম কার্ড পেতে যে টাকা খরচ হয় তার থেকে প্রায় ১০-১৫ গুন বেশি দামে এই দুই যুবক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসে সাইবার জালিয়াতি এবং অবৈধ আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মোবাইল ফোনের চালু সিম কার্ডগুলো বিক্রি করে দিত।' এসডিপিও আরও বলেন,' সিম কার্ডগুলি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ হলেও তাদের প্রকৃত মালিকেরা এই সম্পর্কে কিছুই জানতেন পারেন না।'তিনি বলেন,' প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি দুই ভাইয়ের মধ্যে আশিক এই চক্রের অন্যতম মূল মাথা। এর আগেও একটি সিম কার্ড জালিয়াতি মামলায় তার নাম উঠে এসেছিল এবং তখন থেকেই আমরা আশিকের খোঁজ করছিলাম।' আশিকের পুলিশি হেফাজতের আবেদন করে শনিবার তাকে আদালতে পেশ করা হয়েছে। যদিও তার ভাইয়ের পুলিশি হেফাজতের আবেদন করা হয়নি।
বেলডাঙা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে , ধৃত দুই ভাইয়ের থেকে সরকারি সংস্থার একগাদা সিমকার্ড ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এবছর মে মাসে বেলডাঙা থানার মহ্যমপুর গ্রামে বেআইনিভাবে বিভিন্ন কোম্পানির চালু সিম কার্ড বিক্রি করার অভিযোগে পুলিশ মোমিন মল্লিক (২০)এবং হোসেন মল্লিক (২৬) নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছিল। তাদের হেফাজত থেকে সেই সময় ১১৮৩ টি বিভিন্ন কোম্পানির চালু মোবাইল ফোনের সিম কার্ড এবং ১১ টি কিপ্যাড যুক্ত মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছিল। সেই সময় পুলিশি তদন্ত উঠে এসেছিল এই দুই যুবক ঝাড়খন্ড এবং বিহারে পুরনো জিনিস কেনাবেচার কাজে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরনো সিম কার্ড কিনত এবং তারপর সেগুলো বিভিন্ন অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চড়া দামে বিক্রি করে দিত। ফের একবার একই ধরণের অভিযোগে মহ্যমপুর গ্রামের দুই যুবক গ্রেপ্তার হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে তা হলে কি বেলডাঙা থেকেই দেশ জুড়ে জালিয়াতদের মোবাইল ফোনের সিম কার্ড সরবারহ করা হচ্ছে?
এসডিপিও বলেন ,'বেলডাঙা থানায় ভুয়ো সিম কার্ড বিক্রির মোট তিনটি মামলার রুজু হয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত আমরা ২০০০-এর বেশি চালু সিম কার্ড উদ্ধার করেছি।' প্রতারণা ঠেকানোর জন্য তিনি সকলকে অনুরোধ করেন ,পুরোনো ফোন নম্বর ছেড়ে দেওয়া বা ফোন ফেলে দেওয়ার আগে চালু থাকা সিম কার্ডটি নষ্ট করে দিতে বা 'ডিঅ্যাক্টিভেট' করে দেওয়ার জন্য। এসডিপি আরও জানান,' একদিন আগেই রেজিনগর থানা এলাকার একটি দোকান থেকে এক ব্যক্তিকে বেশ কিছু সিম-সহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির কাছে মোবাইল ফোনের সিম কার্ড বিক্রির বৈধ অনুমোদন থাকলেও তিনি নথি জালিয়াতি করে সিম কার্ড বিক্রি করছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। বেলডাঙার এই চক্রের সঙ্গে তার কোনও যোগ রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'