ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ছাব্বিশের আগে সংগঠনের খুঁটিনাটি আতসকাচের নিচে রেখে, সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তা কাটিয়ে উঠতে এখন থেকেই উদ্যোগী রাজ্যের শাসকশিবির। সেই লক্ষ্যে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংগঠনিক জেলাস্তরে সংগঠনগুলিকে নিয়ে বৈঠক করছেন। শনিবার কাঁথি ও দার্জিলিং সমতল সাংগঠনিক জেলা নিয়ে বৈঠক সারলেন তিনি। দার্জিলিং সমতলের জন্য অভিষেকের বার্তা, পাহাড় জিততে হলে বাঙালি অস্মিতায় শান দিতে হবে। আর কাঁথিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রুখতে কড়া দল। অখিল গিরি-উত্তম বারিককে একসঙ্গে কাজ করার বার্তা দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
শনিবার ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কার্যালয়ে প্রথমে দার্জিলিং সমতল সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে আলোচনায় বসেন তিনি। উত্তরবঙ্গে পদ্মশিবিরের প্রভাব এখনও বেশ ভালোই। বিগত নির্বাচনগুলিতে একাধিক আসন গিয়েছিল বিজেপির দখলে। চব্বিশের লোকসভা ভোটে যদিও তার অনেকটা উদ্ধার করেছে ঘাসফুল শিবির। তবে ছাব্বিশকে সামনে রেখে উত্তরবঙ্গের গেরুয়া গড় দুরমুশ করে দিতে মরিয়া তৃণমূল। কীভাবে তা সম্ভব? এদিন দার্জিলিং সমতলের সংগঠনকে অভিষেকের বার্তা, ” জেতার সুযোগ সবসময়েই আছে। সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রচারে নামুন। পুর এলাকার ফলাফল বিধানসভায় ফেরাতেই হবে। তাহলে শিলিগুড়ি জয় সহজ হবে, কাউন্সিলরদের সেই দায়িত্ব নিতে হবে।” জানানো হয়েছে, শিলিগুড়ির ক্ষেত্রে তিনটি টাউনের বদলে ৬ টি হবে। অর্থাৎ টাউনের ৩ সংগঠনই দুটো করে ভেঙে দেওয়া হবে। পাশাপাশি, বাঙালি অস্মিতাতেও বিশেষ নজর দিতে হবে উত্তরবঙ্গে। বিশেষ নজর দিতে হবে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে। এই কেন্দ্রটি ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। সেখানকার বিধায়ক বিজেপির শিখা চট্টোপাধ্যায়।
দ্বিতীয়ার্ধ্বে কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সঙ্গে বৈঠকে বসেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি ও কাঁথির তৃণমূল নেতা উত্তম বারিকের মধ্যে চোরা দ্বন্দ্বের কথা জানা শীর্ষ নেতৃত্বের। সেই ‘কাঁটা’ উপড়ে সকলকে একসঙ্গে কাজে করার কড়া বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। সূত্রের খবর, বৈঠকে অখিল গিরিকে সামান্য ধমকও খেতে হয়। তাঁকে অভিষেক বলেন, ” দলের পদাধিকারী ঠিক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই আপনাকে চলতে হবে।” সূত্রের আরও খবর, অখিল গিরিকে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি ও অভিষেক জানিয়েছেন, রামনগরে সংগঠন তাঁকে দেখতে হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা ঠিক করে দেবেন। ঝগড়ায় দলের ক্ষতি হচ্ছে, সে বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে অখিল গিরিকে।
নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে রামনগরের বিধায়ক বলেন, ”আমাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকবে। কিন্তু আমাদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। ভোটের সময়ে আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোড়াফুল চিহ্নকে জেতানোর চেষ্টা করব। ২০২১ সালে ৯ আসনে জিতেছিলাম। এবার আরও বেশি আসন দেব।” উত্তম বারিকও জানিয়েছেন, ”কোনও দ্বন্দ্ব নেই। একসঙ্গে সবাই চলছি।” কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে রাজ্যের টাকা আটকানো ইস্যুতে জোর দিয়ে প্রচার করতে চাইছে কাঁথির সাংগঠনিক নেতৃত্ব। উত্তম বারিকের কথায়, ”টাকা আটকানোর ফল মেদিনীপুরের মানুষ এবার বুঝিয়ে দেবে।”
পাশাপাশি ‘আমার পাড়া আমার সমাধানে’র মাধ্যমে জনসংযোগ আরও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে কাঁথির সংগঠকদের। সবমিলিয়ে, শনিতে দুই সাংগঠনিক জেলার বৈঠকে ছাব্বিশে লড়াইয়ের প্রাথমিক রণকৌশল স্থির করে দেওয়া হয়েছে।