• মৃত্যুর পরেও পুনর্গঠিত সরকারি বোর্ডের সদস্য! রয়েছেন বাতিল হওয়া তিন জনও, বাঁকুড়ায় বিতর্ক
    আনন্দবাজার | ৩০ আগস্ট ২০২৫
  • সাত মাস আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর আগে ছিলেন রাজ্য সরকারের বাউড়ি কালচারাল বোর্ডের সদস্য। মৃত্যুর পরেও তিনি সক্রিয় সদস্য হয়ে রইলেন! বোর্ড পুনর্গঠনের পরেও মৃত ব্যক্তি কী ভাবে সদস্য হলেন, তাই নিয়ে রাজনৈতিক তরজা বাঁকুড়ায়।

    এমনতিতে মৃত এবং ‘ভুয়ো’ ভোটার নিয়ে শাসক-বিরোধী চাপানউতর চলছে। বাঁকুড়ায় তার সঙ্গে যোগ হল রাজ্য সরকারের বাউড়ি কালচারাল বোর্ডে পদাধিকারীদের নিয়ে চর্চা। অভিযোগ, তালিকায় এমন ব্যক্তিও রয়েছেন, যাঁর মৃত্যু হয়েছে ৭ মাস আগে। শুধু মৃত ব্যক্তিই নয়, পূর্বতন বোর্ডের বাতিল হওয়া ৩ সদস্যও নবগঠিত বোর্ডে স্থান পেয়েছেন।

    রাজ্যে পিছিয়ে পড়া তপসিলি জাতিগুলির মধ্যে অন্যতম বাউড়ি। বাংলায় বসবাসকারী বাউড়ি সম্প্রদায়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ২০২১ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাউড়ি কালচারাল বোর্ড গঠনের কথা ঘোষণা করেন। মূলত বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূম— এই পাঁচটি জেলায় বাউড়ি কালচারাল বোর্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ হয়ে থাকে। গত ৪ অগাস্ট বাউড়ি কালচারাল বোর্ড ভেঙে দিয়ে নতুন বোর্ড গঠন করে রাজ্য সরকার। বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ থেকে দেবদাস বাউড়িকে সরিয়ে চেয়ারম্যান করা হয় দীপক দুলেকে। নতুন করে ঘোষণা করা হয় যুগ্ম ভাইস চেয়ারম্যান-সহ কমিটির ১৮ জনের নাম। দেখা যায়, ওই কমিটিতে নাম রয়েছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার কালিপাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা কেশব বাউড়ি।

    স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০২৪ সালের ২০ ডিসেম্বর কেশব মারা গিয়েছেন। তিনি কী ভাবে নতুন করে বোর্ডের সদস্য হলেন, তা নিয়ে যেমন বিতর্ক শুরু হয়েছে। তেমনই সদস্যদের তালিকায় ঠাঁই পাওয়া ধ্রুব দাস, ভাগ্যধর বাউড়ি এবং প্রদীপ রানাকে নিয়েও শুরু হয়েছে তরজা। কারণ, পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিতির কারণে বোর্ডের নিয়ম মেনে পূর্বতন বোর্ড ওই সদস্যদের সদস্যপদ বাতিল করেছিল। সেই বাতিল হওয়া সদস্যদের কেন নতুন করে সদস্য করা হল, তা বুঝে উঠতে পারছেন না বোর্ডেরই একটা বড় অংশ।

    বোর্ড পুনর্গঠিত হওয়ার পর সেখানে এক জন মৃত এবং বাতিল হওয়া তিন সদস্যকে স্থান দেওয়ায় ‘অস্বস্তি’তে বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান দীপক দুলে। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘এক জন পদাধিকারীর মৃত্যুর ঘটনা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের তরফে বোর্ড এবং অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরে জানানো উচিত ছিল। তা না-হওয়াতেই এই সমস্যা হয়েছে। আমরা স্থানীয় ভাবে কেশব বাউড়ির মৃত্যুর খবর শুনেছি। দ্রুত তাঁর নাম বোর্ডের পদাধিকারীর তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে পূর্বতন বোর্ডে বাতিল হয়ে যাওয়া তিন সদস্যর নতুন বোর্ডে স্থান পাওয়ার ঘটনা বোর্ডের বৈঠকে আলোচনা করে দেখা হবে।’’ বাউড়ি কালচারাল বোর্ডের পূর্বতন চেয়ারম্যান তথা বর্তমান বোর্ডের যুগ্ম ভাইস চেয়ারম্যান দেবদাস বাউড়ি বলেন, ‘‘আগের বোর্ডে কেশব বাউড়ি সদস্য ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর আমরা বোর্ডের তরফে শোকপ্রস্তাব এনেছিলাম। তার পরেও নতুন বোর্ডে তাঁর নাম থাকা দুর্ভাগ্যজনক।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বোর্ডের গঠনতন্ত্র অনুসারে পর পর তিনটি বৈঠকে হাজির না-থাকায় তিন সদস্যের পদ বাতিল করা হয়েছিল। তাঁরাও নতুন বোর্ডে স্থান পেয়েছেন বলে জেনেছি। এটি সম্পূর্ণ রাজ্য সরকারের বিষয়।’’

    এ নিয়ে শাসকদলকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি বিরোধীরা। বাঁকুড়ার প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার এই বোর্ডের মাধ্যমে আসলে বাউড়ি সম্প্রদায়ের মানুষের উন্নয়ন চাইছে না, দলের কিছু ধামাধরা মানুষের উন্নয়ন চাইছে। তাই মৃত ব্যক্তি বা কাজ না-করার অভিযোগে সদস্য পদ খোয়ানো ব্যক্তিদের আবার বোর্ডের পদে বসিয়ে বোর্ড পুনর্গঠন করেছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘রাজ্য সরকার বাউড়ি সম্প্রদায়ের প্রকৃত উন্নয়ন চাইলে এই বোর্ডে স্থান পেতেন শালতোড়ার বিজেপির বিধায়ক চন্দনা বাউড়ি। কিন্তু বোর্ডে রাখাই হয়নি। এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে?’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)