প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থায় চাকরি খোঁজা কর্মীর মৌলিক অধিকার! কলকাতা হাই কোর্টের ভর্ৎসনা কর্তৃপক্ষকে, দ্রুত পাওনা মেটানোর নির্দেশ
আনন্দবাজার | ৩০ আগস্ট ২০২৫
একটি সংস্থায় চাকরিরত অবস্থায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী কোনও সংস্থায় চাকরি খোঁজা অপরাধ নয়। এতে নীতিগত কোনও বাধাও নেই। বরং চাকরি খোঁজা, আরও ভাল সুযোগের সন্ধান করা যে কোনও কর্মচারীর মৌলিক অধিকার। এতে কর্তৃপক্ষ হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। একটি মামলায় সম্প্রতি এমনটাই রায় দিল কলকাতা হাই কোর্ট। ৬০ দিনের মধ্যে ওই কর্মচারীর পাওনা মিটিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনাও করা হয়েছে।
২০১২ সালে কলকাতার একটি সংস্থায় টেকনিশিয়ান পদে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন এক যুবক। ১০ বছর সেখানে কাজ করার পর তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থার সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখার অভিযোগ ওঠে। কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিলেন, ওই কর্মী তাঁদের সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, রসিদ, গোপন নথি প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থায় চালান করে দিচ্ছেন। এতে সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। ওই কর্মীর বিরুদ্ধে চাকরির শর্তাবলি লঙ্ঘনের অভিযোগও তোলা হয়। ২০২২ সালে তাঁকে ছাঁটাই করে দেন কর্তৃপক্ষ। কারণ হিসাবে ‘অসদাচরণ’ এবং ‘নীতিবিরুদ্ধ কাজ’-এর উল্লেখ করা হয়।
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি শম্পা দত্ত (পাল)-এর বেঞ্চে এই সংক্রান্ত মামলা শুনানির জন্য উঠেছিল। বিচারপতি জানিয়েছেন, কর্মীর বিরুদ্ধে যে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সংস্থা তা প্রমাণ করতে পারেনি। ওই কর্মীর আচরণের কারণে বড় কোনও আর্থিক ক্ষতির নির্দশনও দেখাতে পারেনি। বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘উন্নত পরিষেবা, বাড়তি সুযোগসুবিধার জন্য অন্যত্র চাকরি খোঁজা, তা যদি প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাতেও হয় (যদিও এ ক্ষেত্রে সেই অভিযোগ প্রমাণিত নয়), তা কর্মচারীর মৌলিক অধিকার। এটা সততা, ভদ্রতা বা নৈতিক দায়িত্ববোধের বিরোধী নয়।’’ সংশ্লিষ্ট সংস্থা ক্ষমতার অপব্যবহার করে কর্মচারীকে হেনস্থা করেছে, জানায় আদালত।
ছাঁটাইয়ের পর প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাতেই যোগ দিয়েছিলেন ওই টেকনিশিয়ান। অভিযোগ, পূর্বের সংস্থা তাঁর প্রাপ্য গ্র্যাচুইটির টাকা মেটায়নি। তা আদায়ের জন্য তিনি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (কন্ট্রোলিং অথরিটি) দ্বারস্থ হয়েছিলেন। ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ওই কর্মীকে গ্র্যাচুইটির ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩০৮ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। সঙ্গে দিতে বলা হয়েছিল বছরে ১০ শতাংশ সুদ। সংশ্লিষ্ট সংস্থাই নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু সেখানে তাদের আবেদন খারিজ হয়ে গেল। আদালত ৬০ দিনের মধ্যে ৮ শতাংশ সুদে কর্মীর পাওনা মিটিয়ে দিতে বলেছে।