• স্বাধীনতার ৭৮ বছর পর দেশের রেল নেটওয়ার্কে জুড়তে চলেছে মিজোরাম, কুতুব মিনারের থেকে ৪২ মিটার উঁচু সেতু দিয়ে ছুটবে ট্রেন
    বর্তমান | ৩১ আগস্ট ২০২৫
  • রাজু চক্রবর্তী, আইজল থেকে ফিরে: ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘লুক ইস্ট’ নীতি নিয়েছিলেন। তার সুফল মেলা শুরু হয়েছে বলে অনেকের অভিমত। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কেন্দ্রের ‘পূবে তাকাও’ টোটকা বদলে যাচ্ছে গেম চেঞ্চারে। স্বাধীনতার ৭৮ বছর পর মিজোরামের রাজধানী আইজল পেতে চলেছে প্রথম রেলপথ। দুর্গম পাহা঩ড়ি এলাকায় নিপুণ কারিগরি দক্ষতায় তৈরি হয়েছে বৈরবি-সাইরাং রেল লাইন। ৫১.৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পাঁচ স্টেশন বিশিষ্ট এই রেলপথ মিজোরামের সঙ্গে দেশের অন্যপ্রান্তের সেতুবন্ধন ঘটাবে। পাহাড়ের উপর এই ট্র্যাক বানাতে ৫৫টি বড় ও ৮৭টি মাঝারি সেতু নির্মাণ হয়েছে। যার মধ্যে ১৯৬ নম্বর ব্রিজটি সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রে। সেতুটি মাটি থেকে ১১৪ মিটার উপরে তৈরি হয়েছে। যা কুতুব মিনারের থেকেও ৪২ মিটার উঁচু। কেবল ব্রিজ তৈরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় প্রকৃতির কোলে গড়ে উঠা এই অভিনব রেলপথ। পাহাড় কেটে রেললাইন পাততে তৈরি করা হয়েছে ৪৮টি টানেল। যার দৈর্ঘ্য ১২ হাজার ৮৫৩ মিটার। এছাড়াও নয়া এই রেল নেটওয়ার্ক বানাতে পাঁচটি রোড ওভার ব্রিজ ও ছ’টি রোড আন্ডার ব্রিজ নির্মিত হয়েছে।

    প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৩ সেপ্টেম্বর বৈরবি-সাইরাং রেলপথের উদ্বোধন করতে পারেন বলে জানা গিয়েছে। বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত ঘেঁসা মিজোরামের সঙ্গে গোটা দেশের রেল ব্যবস্থার এই যোগসূত্র আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারতকে শক্তিশালী করবে বলে অনেকের অভিমত। ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবিত এই রেলপথের শিলান্যাস করেছিলেন। প্রাকৃতিক ও অবস্থানগত প্রতিবন্ধকতায় এই প্রকল্পের কাজ করতে নানা বাধা পেরতে হয়েছে। সবথেকে উচুঁ এই ১৯৬ ব্রিজটি বানাতে গিয়ে ঘটেছিল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে ১৮ নির্মাণকর্মী মারা গিয়েছিলেন। এছাড়াও লাগাতার বৃষ্টি, দুর্গম জনমানসহীন এলাকায় পরিকাঠামো গড়তে লেগে গিয়েছিল বাড়তি সময়। সব বিপত্তি কাটিয়ে সাফল্যের সঙ্গে যাত্রী পরিষেবায় জন্য তৈরি বৈরবি-সাইরাং নয়া রেলপথ। গুচ্ছ টানেল ও ব্রিজ পেরিয়ে পয়লা মে ৫১ কিলোমিটার পথে সফল ট্রায়াল হয়। রেল কর্তাদের আশা, মিজোরামের পর্যটন বিকাশে নয়া দিগন্ত খুলে দেবে এই নতুন রেললাইন। কর্মসংস্থান ও শিল্প-বাণিজ্য বিকাশে সহায়ক হবে এই লাইন। রেল পরিবহণে পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে জাতীয় পর্যায়ে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এই রেল ট্র্যাক। 
  • Link to this news (বর্তমান)