• ১৬০০ থেকে ছাত্র কমে ২৭০, উপস্থিত মাত্র ১২
    বর্তমান | ৩১ আগস্ট ২০২৫
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: একসময় ছাত্রসংখ্যা ছিল ১৬০০। সেখান থেকে কমতে কমতে এখন ২৭০ জন। আর শনিবার স্কুলে ছাত্রের উপস্থিতির সংখ্যা ছিল মাত্র ১২! না, কোনও প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল নয়। এই ছবি খোদ জলপাইগুড়ি হাইস্কুলের। ফি বছর কমছে ছাত্রসংখ্যা। এরইমধ্যে আবার খাতায়কলমে যতজন পড়ুয়া, রোজদিন স্কুলে দেখা মেলে না তাদের বেশিরভাগের। এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়া খুঁজতে হন্যে স্কুলের শিক্ষকরা। বাড়ি বাড়ি ছুটছেন তাঁরা। কিন্তু আদৌও কি বদলাবে ছবিটা? সংশয় শিক্ষকদের একাংশের মনেই। কারণ, প্রাইমারির হাল যে খারাপ। 

    জলপাইগুড়ি হাইস্কুল ক্যাম্পাসে চলত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষক না থাকায় ধীরে ধীরে কমতে থাকে সেই স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা। গতবছর একেবারে তলানিতে এসে ঠেকায় বন্ধ হয়ে যায় ওই সরকারি প্রাইমারি। পাশে একটি শ্রমিক স্কুল রয়েছে। সেখান থেকে আগে কিছু ছাত্র ভর্তি হতো জলপাইগুড়ি হাইস্কুলে। সেটিরও হাল খারাপ। ফলে এখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মিলবে কোথায়, সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না হাইস্কুলের শিক্ষকরা। এদিকে, ছাত্রসংখ্যা কমতে থাকায় ঐতিহ্য হারাচ্ছে জলপাইগুড়ি হাইস্কুল।

    সঙ্কটের কথা স্বীকার করে নিয়ে স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, একসময় আমাদের ছাত্রসংখ্যা ছিল ১৬০০। এখন কমতে কমতে তা তিনশোরও নীচে নেমে এসেছে। পুজোর আগেই আমরা অভিভাবকদের নিয়ে মিটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুজোর পর থেকে বাড়ি বাড়ি যাওয়া হবে। প্রাথমিক স্কুলগুলির কাছেও আমরা পড়ুয়া দেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।

    পঞ্চম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত সবমিলিয়ে এদিন স্কুলে উপস্থিত ছিল মাত্র ১২ জন! কেন এমন অবস্থা? সহকারী প্রধান শিক্ষকের দাবি, উপস্থিতির হার এতটা খারাপ হয় না। এদিন সকাল থেকে বৃষ্টি ছিল। তাছাড়া স্কুলে পাড়ায় সমাধান শিবির ছিল। এসবের জন্য হয়তো পড়ুয়া আসেনি। যদিও পাড়ায় সমাধানের জন্য ক্লাস ব্যাহত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। বলেন, পাড়ায় সমাধানের জন্য নীচে কয়েকটা ঘর নেওয়া হয়েছিল। এনিয়ে নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, নীচে যাদের ক্লাস, তাদের দোতলায় পঠনপাঠন হবে এদিন।

    জলপাইগুড়ি হাইস্কুলে বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্রসংখ্যা ১০ জন। মাধ্যমিক দেবে ২৩ জন। উচ্চ মাধ্যমিক দেবে ৩২ জন। ১৯৫৯ সাল থেকে যে স্কুল চলছে, তার এই হাল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জলপাইগুড়ি হাইস্কুলের প্রাক্তনীরা এখন দেশ-বিদেশে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সহ নানা পেশায় রয়েছেন। কেন সেই কৌলিন্য হারাচ্ছে স্কুল, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। প্রধান শিক্ষক এদিন অবসর নিয়েছেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন, একাদশ-দ্বাদশে আমাদের বিজ্ঞান ও কলাবিভাগ দুই-ই রয়েছে। আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই, ফিশারি কিংবা পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয় উচ্চ মাধ্যমিকে চালুর চেষ্টা করছি। নতুন বিষয় পেলে যদি কিছু পড়ুয়া বাড়ে, সেটাই আমাদের মূল টার্গেট। • নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)