সংবাদদাতা, বালুরঘাট: প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে সংসার টেকেনি। পণ ও অন্যান্য কারণে তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গেও ছিল অশান্তি। চতুর্থ বিয়ে করার পরিকল্পনা নিয়ে এবং তৃতীয় স্ত্রীকে জীবন থেকে সরিয়ে ফেলতে তাঁকে গাড়ি চাপা দিয়ে খুনের পরিকল্পনা নিয়ে ফেলে আবগারি দপ্তরের আধিকারিক। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। তৃতীয় স্ত্রীকে গাড়ি চাপা দিয়ে ধারালো ও ভারী বস্তু দিয়ে থেতলে নৃশংসভাবে খুন করার অভিযোগ ওঠে।
খুনের ঘটনাটি ৭ বছর আগের। পতিরামের নিচাবন্দর এলাকার সেই ঘটনায় জেলাজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে সাতবছর ধরে জেলবন্দি ছিল অভিযুক্ত আধিকারিক। সেই মামলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল বালুরঘাট জেলা আদালত। শনিবার দীর্ঘক্ষণ শুনানির পরে বিচারক এই রায় দেন।
আদালত সূত্রে খবর, দোষী দিবাকর ঘোষকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। আরেকটি ধারায় সাতবছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বালুরঘাট জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী ঋতব্রত চক্রবর্তী বলেন, এটা একটা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। বধূকে নিশংসভাবে খুন করা হয়েছিল। বধূকে গাড়ি চাপা দিয়ে দুর্ঘটনা বলে প্রমাণ করার চেষ্টা হচ্ছিল।
দিবাকর গঙ্গারামপুরে আবগারি দপ্তরের আধিকারিক ছিল। তার স্ত্রী অনন্যা দত্ত রায় কলকাতা নিবাসী ছিলেন।
আদালত সূত্রে খবর, ২০১৮ সালের ১০ জুন সকালে পতিরামের নিচাবন্দর এলাকায় প্রাচীর ঘেরা নিজের বাড়িতে ছোটগাড়ি দিয়ে স্ত্রীকে চাপা দেয় দিবাকর। পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বধূকে ফের ভারী বস্তু দিয়ে থেতলে খুন করা হয়। ঘটনার পরই পলাতক ছিল অভিযুক্ত। প্রতিবেশীরাই বধূকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরের দিন বালুরঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে মৃতের পরিবার।
মৃতের বাবা অমলেন্দু দত্ত রায় বলেন, জামাই ও তার মায়ের নামে অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে চলছিল তদন্ত। সেখানেই তদন্তকারীরা জানতে পারেন, দিবাকরের ষড়যন্ত্র।
পরিবার ও পুলিস সূত্রে খবর, দিবাকর আগেও দুই বিয়ে করেছিল। পরে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। অনন্যা তৃতীয় স্ত্রী ছিল। এরপরও চতুর্থ বিয়ে করতে চেয়েছিল দিবাকর। তাকে সরাতেই খুনের পরিকল্পনা। এদিকে দিবাকরের মাকে বেকসুর খালাস করেছে আদালত।