বাংলা বলায় অসমের ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক মুর্শিদাবাদের তিন
বর্তমান | ৩১ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: ‘বাংলায় কথা বললেই কি বাংলাদেশি বলে ধরে নিতে পারে?’ এই প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রকে সমালোচনা করেছে শীর্ষ আদালত। তবে তাতে বাঙালিদের উপর অত্যাচার দেশে মোটেও কমেনি। উল্টে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের তিন ফেরিওয়ালাকে বাংলাদেশি সন্দেহে অসমের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে বন্দি করে। অভিযোগ, মুক্তি দিতে দেড় লক্ষ টাকা দাবি করেছে অসম পুলিস।
২২ আগস্ট মুর্শিদাবাদ থেকে অসমে যান শক্তিপুর থানার সোমপাড়ার নূতনপাড়ার নজরুল ইসলাম, সানাউর মল্লিক ও বেলডাঙার জাহির শেখ। তাঁরা অসমের নগাঁও জেলার হাইবোরগাও এলাকায় জিনিসপত্র ফেরি করতেন। তাঁদের বাংলায় কথা বলতে দেখে ওই এলাকার কয়েকজন পুলিসে খবর দেয়। খবর পেয়েই আসে পুলিস। সটান ধরে নিয়ে চলে যায়। তিনজনের কাছে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ইত্যাদি প্রমাণপত্র ছিল। কিন্তু পুলিসে সেসব কিছুই গ্রাহ্য করেনি। সোজা ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে আটকে দেয়। তাঁদের হয়ে বলতে থানায় গিয়েছিলেন অসমে কর্মরত মুর্শিদাবাদের কয়েকজন শ্রমিক। তাঁদের অভিযোগ, দেড় লক্ষ টাকা দিলে তবে তিনজন ছাড়া পাবে বলে জানিয়েছে পুলিস।
জানতে পেরে তিন ফেরিওয়ালার পরিবার তৃণমূলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চকে খবর দেয়। রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম রাজ্য পুলিসের এক শীর্ষ আধিকারিককে বিষয়টি জানান। খবর যায় মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিসের কাছে। তারা অসম পুলিসের সঙ্গে কথা বলেন। তবে শনিবার বিকেল পর্যন্ত তিন ফেরিওয়ালা ছাড়া পাননি বলেই জানা গিয়েছে। নজরুলের স্ত্রী জেসমিন বিবি বলেন, ‘স্বামী ওখানে পাঁচ বছর ধরে জিনিস ফেরি করছেন। পাঁচ মাস আগে হৃদযন্ত্রের অপারেশনের জন্য বাড়ি এসেছিলেন। এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। আমাদের অভাবের সংসার। পুলিস দেড় লক্ষ টাকা চেয়েছিল। ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপর ওদের ছেড়ে দেয়। কিন্তু আবার মাঝ রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে।’
অতিরিক্ত পুলিস সুপার(লালবাগ) রাসপ্রীত সিং বলেন, ‘ওঁদের ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। সেখানকার পুলিসের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।’ হরিহরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, ‘ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বিষয়টি জানান। স্থানীয় থানাকে জানাই। রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামকেও জানিয়েছি। ভিনরাজ্যে গিয়ে আমাদের জেলার মানুষ বিপদে পড়েছেন। আমরা সবার আগে তাঁদের ফেরানোর ব্যবস্থা করছি।’ সামিরুল বলেন, ‘বারবার ভিনরাজ্যে গিয়ে আমাদের পরিযায়ী শ্রমিকরা হেনস্তা হচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমরা গর্জে উঠব।’