নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম: নীল আকাশে পেঁজা তুলোর ঘনঘটা। বৃষ্টির জল পেয়ে আরও সবুজ হয়ে উঠেছে বনানী। পথে-প্রান্তরে কাশফুলের কোলাকুলি। প্রকৃতির সাজে আগমনির বার্তা। আর কে না জানে, বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে! পুজোর গন্ধ নাকে লাগলে তাকে ঘরে আটকে রাখা দায়! এবারও তার কোনও ব্যতিক্রম ঘটছে না। এ বছর পুজোয় বাঙালির ‘ফেভারিট ডেস্টিনেশন’ হয়ে উঠতে চলেছে ঝাড়গ্রাম। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো জঙ্গলমহলের অন্যান্য জেলায়ও পুজোর সময় ভিড় উপচে পড়ার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। এখন থেকেই যেভাবে বুকিং শুরু হয়েছে, তাতে খুশি গোপন করছেন না ঝাড়গ্রামের পর্যটন ব্যবসায়ী ও হোটেল মালিকরা। অনেকে এখনই পছন্দের থাকার জায়গা পাচ্ছেন না। কারণ, আগেই তা বুকিং হয়ে গিয়েছে।
দেড় দশক আগেও যেসব এলাকা ছিল মাওবাদী সন্ত্রাসের মুক্তাঞ্চল, এখন তা প্রকৃতিপ্রেমী ও পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। শাল, পিয়াল, মহুয়ার জঙ্গলে বুনো হাতি, হরিণ, ময়ূরের আনাগোনা, রং-বেরংয়ের পাখি, তিরতির করে নেমে আসা ঝর্না—কী নেই! লাল মাটির সঙ্গে মিশে রয়েছে আদিম জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য। কাঁকড়াঝোড়ের জঙ্গলে নিঃশব্দে বিচরণ করে বন্যপ্রাণীরা। নির্জন জঙ্গলে কান পাতলে শোনা যায় শুকনো পাতার উপর দিয়ে সরীসৃপের চলে যাওয়ার শব্দ। বেলপাহাড়ী বাজারের ৭ কিমি দূর দিয়ে বয়ে গিয়েছে তারাফেনি নদী। শোনা যায়, নব্য প্রস্তর যুগেও মানুষের বসবাস ছিল এই নদীর তীরে। আদিম মানুষের লালজল গুহা আজও বিস্ময় নিয়ে টিকে রয়েছে। গুহার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জলে তামা ও লোহার মিশ্রিত স্বাদ পাওয়া যায়। ঢাঙ্গিকুসুম, ঘাগরা জলপ্রপাত নেমে এসেছে নিজের ছন্দে। এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানেই দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। হোটেল ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পর্যটকদের একটা বড় অংশ এবার বেলপাহাড়ী আসতে চলেছেন। বেলপাহাড়ী, কাঁকড়াঝোড়ের বেশিরভাগ গেস্ট হাউস, হোম স্টে-তে এখন থেকেই তাই ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই’ অবস্থা।
ঝাড়গ্রাম শহরেই রয়েছে একাধিক দ্রষ্টব্য। ইতালিয় ও ইসলামিক স্থাপত্যের মিশেলে নির্মিত ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি, বাঁদরভুলা ট্রাইবাল ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার, জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক, চিল্কিগড় কনকদুর্গা মন্দির, চিল্কিগড় রাজবাড়ি দেখতে পর্যটকদের ঢল নামবে এবার। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির হেরিটেজ হোটেলের তরফে পর্যটকদের রসনা তৃপ্তির বিশেষ আয়োজন করা হচ্ছে। ৩০০ বছর পর চিল্কিগড় রাজবাড়ির অন্দরমহল খুলে দেওয়া হয়েছে সাধারণের জন্য।
ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এবছর একটা নতুন ঝোঁক দেখতে পাচ্ছি। শহর ছেড়ে গ্রামের পুজো দেখতে চাইছেন বহু মানুষ। ঝাড়গ্রাম রূপের ডালি নিয়ে হাজির হয়েছে তাঁদের সামনে। জেলাজুড়ে প্রচুর হোম স্টে হয়েছে। অধিকাংশেরই বুকিং সারা। অতিথিদের আপ্যায়নে কোনও ত্রুটি রাখতে চাই না আমরা।’