মার্চেন্ট নেভিতে পাক ও চীনা গুপ্তচর নিয়োগের অভিযোগে উদাসীন কেন্দ্র, রিপোর্ট জমা না দেওয়ায় তীব্র ভর্ৎসনা হাইকোর্টের
বর্তমান | ৩১ আগস্ট ২০২৫
শুভঙ্কর বসু, কলকাতা: ভারতীয় মার্চেন্ট নেভিতে পাক ও চীনা নাগরিকদের অবৈধ নিয়োগ পাইয়ে দিয়ে চরবৃত্তির মারাত্মক অভিযোগ! যে কারণে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে চূড়ান্ত উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তারপরও কোনও হেলদোল নেই। ১ বছর ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর করেনি অমিত শাহের মন্ত্রক। তাই বৃহস্পতিবার রীতিমতো ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল কেন্দ্রকে। তিন সপ্তাহের মধ্যে নির্দেশ কার্যকর না হলে মন্ত্রকের কর্তাদের সশরীরে হাজিরার জন্য ডেকে পাঠানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিচারপতি সুজয় পালের ডিভিশন বেঞ্চ।
মামলার বয়ান বলছে, ভারতের ‘মেরিটাইম ল’ বা সমুদ্র আইন অনুযায়ী ভারতীয় মার্চেন্ট নেভির জাহাজগুলিতে কাজের জন্য শুধুমাত্র ভারতীয়দেরই নিয়োগ করা যায়। কিন্তু অভিযোগ, ভারতীয় জাহাজগুলিতে কর্মী নিয়োগের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত সংস্থাগুলি অর্থাৎ ‘ইন্ডিয়ান রিক্রুট অ্যান্ড প্লেসমেন্ট সার্ভিসেস লাইসেন্স হোল্ডার’রা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ইন্টারভিউ নিয়ে পাকিস্তান, চীন, ইয়েমেন ও ইরানের নাগরিকদের ভারতীয় জাহাজগুলিতে নিয়োগ করছে। বিষয়টি বেআইনি তো বটেই, সেই সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও উদ্বেগের। মামলায় আরও অভিযোগ, ভারতীয় জাহাজগুলির দেশের জলসীমায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকার কথা নয়। আর সেই সুবাদেই নিয়োগপ্রাপ্ত বিদেশি নাগরিকরাও জাহাজের সঙ্গে সহজেই এদেশে প্রবেশের ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছেন। যা দেশের নিরাপত্তার জন্য রীতিমতো আশঙ্কার। শুধু তাই নয়, মামলায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, ভারতীয় ভূখণ্ডে চরবৃত্তির জন্যই এই ধরনের নিয়োগ করা হচ্ছে। ফলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। কতগুলি ভারতীয় জাহাজে ঠিক কতজন বিদেশি নাগরিককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। সেই কারণে ইউএপিএ ধারায় মামলা দায়ের করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএকে দিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়ে মামলা হয়। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে গত বছরের ৪ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছিল প্রধান বিচরিপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। তিন সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ ছিল। কিন্তু ১ বছর ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনও রিপোর্ট জমা পড়েনি। কেন্দ্রের এই ঢিলেঢালা মনোভাবে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা নিয়ে কি ছেলেখেলা করছে কেন্দ্রীয় সরকার? তা নাহলে এত গুরুতর অভিযোগেও তারা উদাসীন থাকে কীভাবে!