নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি মতোই শনিবার ১৮০৪ জন অযোগ্য চাকরিপ্রাপক শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করল এসএসসি। সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছিল, সাতদিনের মধ্যে অযোগ্য শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আদালতের কাছে খবর রয়েছে, অনেক অযোগ্যই নতুন চাকরির পরীক্ষায় বসছেন। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। শুক্রবার কল্যাণবাবু জানিয়েছিলেন, একদিনের মধ্যেই এই তালিকা প্রকাশ করবে এসএসসি। সেই অনুযায়ী শনিবার রাত ৮টা নাগাদ তালিকা প্রকাশ করে দেয় স্কুল সার্ভিস কমিশন। তালিকা প্রকাশ নিয়ে এদিন বিভিন্ন মহলের আগ্রহ তুঙ্গে ছিল। একবার শোনা যায়, তালিকা প্রকাশ করেও তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে এসএসসি। তবে এসএসসি’র তরফে তা নিশ্চিত করা হয়নি। সাংবাদিকদের বারবার সম্ভাব্য সময় বলেও তার মধ্যে তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি এসএসসি। সূত্রের খবর, তালিকা স্ক্রুটিনি করতে বাড়তি সতর্কতার কারণেই এই বিলম্ব। শুধু অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশই নয়, তাঁদের মধ্যে যাঁরা দ্বিতীয় এসএলএসটি অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আয়োজিত হতে চলা চাকরির নতুন পরীক্ষায় আবেদন করেছিলেন, তাঁদের অ্যাডমিট কার্ড বাতিলের তালিকাও প্রকাশ করেছে এসএসসি। নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকতার পরীক্ষায় ১০২০টি অ্যাডমিট কার্ড বাতিল করা হয়েছে। আর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় বাতিল হয়েছে ১১৪০টি অ্যাডমিট। তবে অনেক ক্ষেত্রে একই ব্যক্তি দু’টি স্তরের পরীক্ষায় বসার জন্য আবেদন করেছিলেন। তাই অ্যাডমিট কার্ড বাতিলের মোট সংখ্যা ২১৬০ হলেও আসলে ১৪০০ প্রার্থীর পরীক্ষা দেওয়া হচ্ছে না।আদালত নির্দেশিত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার তাড়া থাকায় আবেদন প্রক্রিয়ায় সেভাবে ছাঁকনি রাখেনি এসএসসি। ফলে অযোগ্যদের সিংহভাগই আবেদন করতে পেরেছিলেন। অ্যাডমিট কার্ড ছাড়ার আগে কিছুটা বাছাই হলেও বহু অযোগ্যই তা পেয়ে যান। এসএসসি একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, অ্যাডমিট কার্ড পাওয়া মানেই তিনি বৈধ চাকরিপ্রার্থী নন। তাঁর প্রার্থীপদের বৈধতা নিশ্চিত হবে ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন বা তথ্য যাচাই পর্বে। ফলে তাঁরা পরীক্ষায় পাশ করলেও চাকরি পেতেন না।আদালত অবশ্য এসএসসি’র এসব যুক্তি মানতে চায়নি। কারণ এতে ফাঁক গলে অযোগ্যদের চাকরি পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই একেবারে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রথম পর্ব, অর্থাৎ পরীক্ষায় বসা থেকেই অযোগ্যদের বিরত রাখতে চেয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সেই অনুযায়ী অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই অযোগ্যরা শুধু সারা জীবনের জন্য সরকারি চাকরির আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন, তা নয়। তাঁরা সুদ সমেত বেতনের অর্থও সরকারকে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবেন। সুপ্রিম কোর্ট এমনই নির্দেশ দিয়েছে।৭ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিচ্ছে এসএসসি। তার আগে অযোগ্য শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশ করা হল। এরপরেই রয়েছে শিক্ষাকর্মী নিয়োগের পরীক্ষা। তার আগে অযোগ্য শিক্ষাকর্মীদের তালিকাও একইভাবে প্রকাশ করতে হবে। চাকরিচ্যুত শিক্ষাকর্মীদের একটি সামাজিক ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আইনি জটিলতায় সেই উদ্যোগ আটকে রয়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট হাজার শিক্ষাকর্মী পদে নিয়োগের পরীক্ষার জন্য আবেদন নেবে এসএসসি। সেক্ষেত্রেও অযোগ্যদের চিহ্নিত করে আবেদন পর্ব থেকেই ছেঁটে ফেলতে হবে। তবে বেশ কিছু শিক্ষক সংগঠন ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছে, অযোগ্যদের যখন চিহ্নিতই করা গেল, তাহলে বাকি যোগ্যদের কেন ফের পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে?