• বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে জোড়া প্রস্তাবে আক্রমণের কৌশল তৃণমূলের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ৩১ আগস্ট ২০২৫
  • বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন বসিয়ে বিজেপিকে কড়া বার্তা দিতে মরিয়া তৃণমূল। আসন্ন অধিবেশনে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের উপর বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে চলা ‘জুলুম’-এর বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা হচ্ছে। পাশাপাশি, ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা স্পেশ্যাল ইনটেনসিভ রিভিউ, সংক্ষেপে এসআইআর-এর বিরুদ্ধেও পৃথক প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাসকদল। দলীয় সূত্রের দাবি, এই ‘জোড়া প্রস্তাব’ দিয়েই বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক লড়াইয়ের মঞ্চ তৈরি করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    বিধানসভার সচিবালয় জানিয়েছে, আগামী সোমবার থেকে শুরু হবে চার দিনের এই সংক্ষিপ্ত অধিবেশন। প্রথম দিন শোকপ্রস্তাব পেশ করে অধিবেশন মুলতবি রাখা হবে। মঙ্গলবার আনা হবে বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষদের উপর আক্রমণের নিন্দা প্রস্তাব। বুধবার করম পুজোর জন্য অধিবেশন বসবে না। বৃহস্পতিবার অধিবেশনের শেষ দিনে এসআইআর-এর বিরোধিতায় আনা হবে আরেকটি প্রস্তাব, যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা চলবে।

    তৃণমূল সূত্রে খবর, রাজস্থান, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র ও ওড়িশার মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলার শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের উপর একাধিক আক্রমণ ও হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে গত কয়েক মাসে। অভিযোগ, অনেককেই হেনস্থা করার পাশাপাশি পুশব্যাক করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার পর থেকেই সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের শাসকদলের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও। রাজ্য সভার সদস্য সামিরুল ইসলামও এ বিষয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে আইনগত ও প্রশাসনিক সাহায্য করে চলেছেন। এবার সেই ক্ষোভকেই বিধানসভা মঞ্চে লিপিবদ্ধ করে রাখতে চাইছে তৃণমূল।

    সূত্রের খবর, শাসকদলের এক বিধায়ক জানিয়েছেন, ‘আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে বাংলার মানুষের মধ্যে অস্মিতার বোধকে আরও শান দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই রাজপথ থেকে বিধানসভা— দুটো মঞ্চেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কৌশল নেওয়া হয়েছে।’

    অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়েও সরব হয়েছে তৃণমূল। অভিযোগ, এই প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকা থেকে বহু ভোটারকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, যা আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের ভোটাধিকারে বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, এই প্রস্তাবের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা এবং রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোই তাঁদের মূল লক্ষ্য।

    তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচি থেকে নবান্নে ফিরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে নির্দেশ দেন, বিশেষ অধিবেশনের উদ্যোগ নিতে। তারপর থেকেই রাজভবন, বিধানসভার স্পিকার ও পরিষদীয় দপ্তরের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ শুরু হয়। শুক্রবারের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব নথি বিধানসভার সচিবালয়ে পৌঁছে গিয়েছে।

    এদিকে রাজ্যের বিরোধী শিবির বিজেপি অবশ্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। বিজেপির পরিষদীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও, কার্যবিবরণী কমিটির বৈঠকের পর কৌশল ঠিক করার ইঙ্গিত দিয়েছেন ঘনিষ্ঠ মহলে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, তৃণমূলের এই কৌশলকে ভাঙতে পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটতে পারে পদ্মশিবিরও।

    অতএব, বিশেষ অধিবেশনে বাংলার ‘অস্মিতা’ ও ভোটার অধিকারকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হতে চলেছে বিধানসভা, এমনই ইঙ্গিত মিলেছে রাজনীতির অন্দরে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)