• নাম তার ‘হিউম্যান জিপিএস’, শয়ে-শয়ে জঙ্গিকে অনুপ্রবেশ করিয়েছিল একা হাতে, কুখ্যাত বাগু খানকে গুলি করে মারল নিরাপত্তা বাহিনী
    আজকাল | ৩১ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: শনিবার গুরেজ সেক্টরে বড়সড় সাফল্য পেল নিরাপত্তা বাহিনী। বহু বছর ধরে সন্ত্রাসের দুনিয়ায় ‘হিউম্যান জিপিএস’ নামে পরিচিত কুখ্যাত জঙ্গি বাগু খান ওরফে সমুদ্র চাচাকে গুলি করে হত্যা করল সেনারা। ১৯৯৫ সাল থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঘাঁটি গেড়েছিল বাগু খান। সেনা সূত্রে খবর, বাগু মূলত গুরেজ ও আশপাশের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় একশোরও বেশি জঙ্গিকে অনুপ্রবেশ করানোর দায়িত্বে ছিল। ওই সেক্টরের ভূখণ্ডের প্রতিটি গোপন পথ তার নখদর্পণে থাকায় অধিকাংশ চেষ্টাই সফল হত। এজন্যই তাকে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন বিশেষভাবে ব্যবহার করত। জানা গিয়েছে, বাগু মূলত হিজবুল কমান্ডার হলেও লস্কর-জইশসহ প্রায় সব জঙ্গি সংগঠনই তাদের সন্ত্রাসবাদীদের অনুপ্রবেশ করানোর জন্য বাগুর সাহায্য নিত। তাদের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সাহায্য করত বাগু খান।

    বছরের পর বছর নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে চললেও এবার আর রক্ষা পেল না বাগু। শনিবার নওশেরা নার এলাকায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হয়ে খতম হয় বাগু খান ও আরও এক জঙ্গি। সেনার এই সাফল্যকে সীমান্তে সক্রিয় জঙ্গি নেটওয়ার্কের বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, এর আগে বৃহস্পতিবারও বান্দিপোরা জেলার গুরেজ সেক্টরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা দুই জঙ্গিকে নিকেশ করেছিল ভারতীয় সেনা। ওই অভিযান চলেছিল অপারেশন নওশেরা নার-ফোরের অধীনে। সেখানে তৎপর জওয়ানরা ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অনুপ্রবেশকারীদের আটক করে মারণ সংঘর্ষে খতম করে। উল্লেখ্য, শনিবার প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এল ভারতীয় বায়ুসেনার গোপন সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর বিস্তারিত চিত্র।

    জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে  সংঘটিত ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ নাগরিক নিহত হওয়ার পরপরই এই অভিযান শুরু হয়েছিল। উপবায়ুসেনা প্রধান এয়ার মার্শাল নর্মদেশ্বর তিওয়ারি সামিটে বলেন, এটি ছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা আবারও প্রমাণ করেছে যে ভারতীয় বায়ুসেনা দেশের প্রকৃত তরবারি। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে এই অভিযানের মাধ্যমে শুধু জঙ্গি সংগঠনগুলির পরিকাঠামোই ভেঙে দেওয়া হয়নি, পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্রের আসল মুখও উন্মোচিত হয়েছে। অভিযানে ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে দেওয়া হয়েছিল দুটি উচ্চমূল্যের লক্ষ্য। একটি ছিল মুরিদকে, যেখানে অবস্থিত লস্কর-ই-তইবার সদর দপ্তর। এটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অপর লক্ষ্য ছিল বাহাওয়ালপুর, যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার ভেতরে এবং সেখানে রয়েছে জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান কার্যালয়।

    একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি সাতটি লক্ষ্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে অর্পিত হয়েছিল। পরিকল্পনার ক্ষেত্রে প্রতিটি লক্ষ্যকে ভাগ করা হয়েছিল একাধিক নিখুঁত ‘এম পয়েন্টে’, যাতে আঘাত সঠিক জায়গায় পৌঁছায় এবং বেসামরিক ক্ষতি বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে। এয়ার মার্শাল তিওয়ারি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা প্রতিটি অস্ত্রকে কাজে লাগিয়েছি। একটি গুলিও অপচয় করা হয়নি।” অপারেশন সিঁদুরের  প্রকাশ্যে আসা তথ্য দেখিয়ে দিল যে ভারতীয় বায়ুসেনা শুধু সীমান্ত রক্ষাতেই নয়, প্রয়োজনে আক্রমণাত্মক অভিযানে অত্যন্ত দক্ষতা ও শক্তি প্রদর্শন করতে পারে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভিযান ভারতের সামরিক কৌশলে এক মোড় পরিবর্তনের মুহূর্ত। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে ভারত আর কেবল প্রতিরক্ষার ভূমিকায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং আক্রমণাত্মক প্রয়াসের মাধ্যমেও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। একইসঙ্গে এটি পাকিস্তানের জন্যও এক কড়া বার্তা যে ভারতীয় ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিটি পদক্ষেপের জবাব দেওয়া হবে বহু গুণ শক্তি দিয়ে।
  • Link to this news (আজকাল)