• পুষ্টি বাড়াতে মিড-ডে মিলে স্কুলের পুকুরের মাছ দিতে নিদান!
    আনন্দবাজার | ৩১ আগস্ট ২০২৫
  • স্কুলের নিজস্ব পুকুর থাকলে সেখানে মাছ চাষ করে তা পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলে দেওয়ার পরামর্শ দিল রাজ্যের শিক্ষা দফতরের অধীনে মিড ডে মিল বিভাগ। দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা জানতে পেরেছেন, সম্প্রতি নিজস্ব পুকুর থেকে মাছ ধরে, তা দিয়ে মাছের ঝোল রান্না করে পড়ুয়াদের পাতে তুলে দিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার একটি স্কুল। সেই উদাহরণকে সামনে রেখে দফতরের পরামর্শ, পড়ুয়াদের পুষ্টি জোগাতে মিড-ডে মিলে দেওয়া যেতেই পারে স্কুলের নিজস্ব পুকুরের মাছ!

    যদিও শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ স্কুলেরই নিজস্ব পুকুর নেই। সে ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের মেনুতে মাছের ঝোল দেওয়া সম্ভব নয়। আবার যে সব স্কুলের নিজস্ব পুকুর রয়েছে, সেখানেও নিয়মিত বা কমপক্ষে মাসে একবার করে হলেও মিড-ডে মিলে মাছের ঝোল খাওয়ানো প্রায় অসম্ভব।

    স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, গ্রামাঞ্চলে স্কুলের নিজস্ব পুকুর থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলি লিজ় দেওয়া রয়েছে। কারণ, স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষে পুকুরের রক্ষণাবেক্ষণ ও মাছ চাষ করা সব সময়ে সম্ভব হয় না। তাই পুকুর লিজ় দেওয়া হয়। সেই লিজ় থেকে বছরে যা টাকা আসে, তা স্কুলের পরিকাঠামোগত উন্নতিতে ব্যবহার করা হয়। সেই সব লিজ়ের পুকুর থেকে পড়ুয়াদের পাতে নিয়মিত মাছের জোগান দেওয়া সম্ভব নয়।

    প্রশ্ন উঠেছে, যেসব স্কুলে পুকুর লিজ় দেওয়া নেই, সেখানেও কি পুকুরে মাছ পড়ুয়াদের পাতে দেওয়া সম্ভব? গ্রামাঞ্চলে কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের স্কুলের পুকুর লিজ় দেওয়া নেই। কিন্তু গ্রামের দিকে বেশিরভাগ স্কুলেই ৫০০ থেকে ৮০০ জন পড়ুয়া মিড-ডে মিলের আওতায় থাকে। অনেক স্কুলে আবার পড়ুয়া-সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি। এ বার মাথাপিছু পড়ুয়ার পাতে ১০০ গ্রামের মাছের টুকরো দিতে হলে ৮০০ জনের ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ কেজি মাছের জোগান দিতে হবে। মাসে একবার করেও পুকুরে জাল ফেলে কি এত পরিমাণ মাছ ধরা সম্ভব, সেই প্রশ্ন উঠছে। বরং পুকুরে জাল ফেলে হয়তো বছরে এক বা দু’বার মাত্র মাছের ঝোল রেঁধে খাওয়ানো সম্ভব হতে পারে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজার এলাকার ঝাঁপবেড়িয়া স্কুলের শিক্ষক তথা মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে নিজস্ব পুকুর আছে। আবার স্কুলে ১৩০০ জন পড়ুয়া মিড-ডে মিলের আওতায় আছে। সব পড়ুয়াকে মাছ খাওয়াতে হলে প্রায় ১৫০ কেজি মাছ ধরতে হবে! মাসে একবার পুকুরে জাল ফেলে প্রায় ১৫০ কেজি মাছ ধরাও কী সম্ভব?’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির এক নেতার মতে, বিশেষ দিনে যে ভাবে স্কুলগুলি নিজেদের উদ্যোগে মিড-ডে মিলে মাংস-ভাত খাওয়ায়, সেভাবেই পুকুর থেকে বছরে দু’-তিন দিন মাছ ধরে পড়ুয়াদের মাছ-ভাত খাওয়াতে পারে। কিন্তু স্কুলের পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়মিত পড়ুয়াদের পাতে মাছের ঝোলের জোগান দেওয়া সম্ভব নয়।

    প্রধান শিক্ষকদের বরং প্রস্তাব, গ্রাম থেকে শহর, সব পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের পুষ্টির জোগান বাড়াতে মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়ানো হোক। এখন প্রাথমিকে মাথাপিছু বরাদ্দ মাত্র ৬ টাকা ৭৮ পয়সা, উচ্চ প্রাথমিকে ১০ টাকা ১৭ পয়সা। দু’ক্ষেত্রেই যদি পড়ুয়াপিছু বরাদ্দ পাঁচ থেকে সাত টাকা করে বাড়ানো হয়, তা হলে স্কুলগুলি বাজার থেকে মাছ কিনেই পড়ুয়াদের পাতে দিতে পারবে। পড়ুয়াদেরপুষ্টির জোগান দিতে পুকুরে জাল ফেলতে হবে না।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)