• স্বাভাবিক বর্ষাতেও দুর্যোগ পাহাড়ে, অতিবর্ষা মরুতে
    আনন্দবাজার | ৩১ আগস্ট ২০২৫
  • সরকারি ভাবে দেশে বর্ষার মরসুম শেষ হতে আর এক মাস বাকি। এই পর্যায়ে এসে মৌসম ভবনের পরিসংখ্যান বলছে, এ বার দেশের অধিকাংশ এলাকাতেই ‘স্বাভাবিক’ বর্ষা হয়েছে। ঘাটতি শুধু বিহার এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একাংশে। এ রাজ্যেরও গাঙ্গেয় বঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গে, মোটের উপরে স্বাভাবিক বর্ষা হয়েছে। বর্ষার নিরিখে এগিয়ে আছে উত্তর-পশ্চিম ও মধ্য ভারত। যা তুলনামূলক ভাবে শুষ্ক এলাকা হিসেবেই পরিচিত। উদ্বৃত্ত বৃষ্টি হয়েছে তেলঙ্গানা এবং কর্নাটকের একাংশেও।

    আবহবিদদের একাংশের মতে, পরিসংখ্যানগত ভাবে স্বাভাবিক বর্ষা হলেও বর্ষার চরিত্রে কিন্তু বদল দেখা গিয়েছে। হিমালয় পার্বত্য এলাকায় অতিবৃষ্টি হয়নি। তবে বার বার মেঘভাঙা বৃষ্টির মতো দুর্যোগ হয়েছে। তাতে ধস, হড়পা বান এবং প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটেছে। মরু এলাকা বলে পরিচিত পশ্চিম রাজস্থানে স্বাভাবিকের থেকে ৩৯ শতাংশ বেশি হয়েছে। তুলনামূলক কম বৃষ্টি হওয়া উত্তর কর্নাটকে স্বাভাবিকের থেকে ৫২ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এ দিকে, হিমালয় পার্বত্য এলাকায় তুলনায় বেশি বৃষ্টি ছিল দস্তুর। কিন্তু এ বছর ১ জুন থেকে ৩০ অগস্ট পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশে স্বাভাবিকের থেকে ১৮ শতাংশ, উত্তরাখণ্ডে ১৪ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। যা মোটের উপরে ‘স্বাভাবিক’ বলেই ঘোষণা করেছে মৌসম ভবন। উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমে ১৭ শতাংশ ঘাটতি আছে। তাই দুর্যোগ ঘটার মতো বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, ধসের মতো বিপর্যয় বার বার ঘটেছে।

    বর্ষার এই চরিত্র বদল নিয়ে আবহবিজ্ঞানী মহলে চর্চাও শুরু হয়েছে। মৌসম ভবনের বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, হিমালয় পার্বত্য এলাকায় গরম, জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস যখন ঠান্ডা হাওয়ার সংস্পর্শে আসে তখন দ্রুত ঘনীভূত হয়ে মেঘপুঞ্জ তৈরি করে। এই মেঘপুঞ্জ বিরাট আকারের হলে অল্প সময়ের মধ্যে একটি ছোট এলাকার উপরে অতিপ্রবল বৃষ্টি ঘটায়। তাকেই ‘মেঘ ভাঙা বৃষ্টি’ বলে। বর্ষায় যদি হিমালয় পার্বত্য এলাকার উপরে অতি শীতল বাতাস বইতে থাকে তা হলে এমন ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে। এ বছর বর্ষায় হিমালয় পার্বত্য এলাকার উপরে অতি-শীতল বাতাসের স্রোত আছে কি না, তা নিয়ে বিশদ গবেষণা প্রয়োজন বলে তাঁরা মনে করছেন। এ দিকে, পরিবেশবিদদের অনেকের পর্যবেক্ষণ, কয়েক বছর ধরেই পাহাড়ি এলাকায় অল্প সময়ে জোরালো বৃষ্টি বাড়ছে। তাই দ্রুত বড় মাপের মেঘপুঞ্জ তৈরি হওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি স্থায়ী পরিবর্তন, তা নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠছে। তবে বৃষ্টির পাশাপাশি, পাহাড়ে পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়নের জেরেও ধস বাড়ছে বলে তাঁরা মনে করেন।

    রাজস্থানে বাড়তি বৃষ্টি অবশ্য নতুন ঘটনা নয় বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা। কেন্দ্রীয় ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব এম রাজীবন গত বছর সংবাদমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকারে জানান, গত কয়েক বছর ধরেই মৌসুমি অক্ষরেখা স্বাভাবিক অবস্থান থেকে দক্ষিণ দিকে সরে থাকছে এবং ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপগুলিও রাজস্থান-গুজরাতের দিকে সরছে। তার জেরেই রাজস্থানে তুলনায় বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়াও, শুষ্ক এলাকায় জমির ব্যবহারে বদল এসেছে এবং তার ফলে বাতাসে আর্দ্রতাও বেড়েছে। তা-ও এই অতিবৃষ্টির সহায়ক বলে আবহবিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)