নাগাল্যান্ডের উপমুখ্যমন্ত্রীর হুমকির পর সাংবাদিককে গুলি!
আজকাল | ৩১ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: নাগাল্যান্ডের ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী ও প্রভাবশালী বিজেপি নেতা ওয়াই. প্যাটনের হুমকির মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই গুলিবিদ্ধ হলেন স্থানীয় টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক দীপ শইকিয়া। ঘটনাটি ঘটেছে মণিপুরের সেনাপতি জেলার নাগা অধ্যুষিত লাইই গ্রামে। আহত সাংবাদিক আপাতত স্থিতিশীল অবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকলেও তাঁর বগলের নিচে একটি গুলি এখনও শরীরে আটকে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
প্যাটনের হুমকি ও বিতর্কিত মন্তব্যর পরেই এই ঘটনা। গত ২৩ আগস্ট অসম-নাগাল্যান্ড সীমান্তবর্তী একটি জনসভায় ওয়াই. প্যাটন প্রকাশ্যে দীপ শইকিয়ার নাম করে তাঁকে হুমকি দেন। হর্নবিল টিভির হয়ে কাজ করা ওই সাংবাদিক সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে স্থানীয় গ্রামবাসীদের বক্তব্য প্রকাশ করেছিলেন। সেই রিপোর্টে বলা হয়, অসম সরকার রেংমা ফরেস্ট রিজার্ভে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও প্রায় এক মাস ধরে স্থানীয় গ্রামে উপস্থিত হননি প্যাটন বা এলাকার বিধায়ক আচুমেম্বো কিকন। কেবল ২১-২২ আগস্ট ওয়োখা জেলার ডেপুটি কমিশনার বিনীত কুমার সীমান্ত পরিদর্শন করেন।
এমন প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষুব্ধ হন প্যাটন। ২৪ আগস্ট হর্নবিল টিভিতে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, প্যাটন সভায় উপস্থিত শইকিয়াকে অপমান করে বলেন, তিনি ইতিমধ্যেই কয়েকজনকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে ওই সাংবাদিককে নাগা এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু কাজটি এখনও হয়নি। তিনি আরও বলেন, তাঁর সামনে বসে থাকাও শইকিয়ার উচিত নয় এবং প্রশ্ন করলে তিনি তা সহ্য করবেন না।এই ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই, ৩০ আগস্ট সেনাপতি জেলার লাইই গ্রামে একটি ফুল প্রদর্শনী কভার করার সময় শইকিয়ার ওপর গুলি চালানো হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক যুবক তাঁর পায়ে ও বগলের কাছে গুলি চালায়। গ্রামবাসীরাই পরে ওই অভিযুক্ত যুবককে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তুঙজয় থানার অফিসার-ইন-চার্জ টিমোথি রোনামাই নিশ্চিত করেছেন যে ঘটনায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। তদন্ত চলছে বলেই বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়েছে সাংবাদিক মহলে। হর্নবিল টিভির সম্পাদক জুথোনো মেক্রো এক বিবৃতিতে বলেন, “দীপ শইকিয়ার ওপর হামলা কেবল ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, এটি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।” তিনি দ্রুত অভিযুক্ত ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। মোকোকচুং টাইমসও এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। তাদের মতে, সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ মানেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর আঘাত। সংবাদপত্রটি জানায়, “এমন ঘটনা প্রমাণ করছে যে এই অঞ্চলে সাংবাদিকরা ক্রমশ বাড়তি ঝুঁকির মুখে পড়ছেন। রাজ্য, নাগরিক সমাজ ও সাধারণ মানুষকেই একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায়।” এর আগে, সাংবাদিকের প্রতি হুমকির ঘটনায় কোহিমা প্রেস ক্লাব ও মোকোকচুং প্রেস ক্লাবও প্যাটনের সমালোচনা করেছিল।
প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার সতর্কবার্তা ইতিমধ্যেই প্রচারিত হয়েছে। ৩১ আগস্ট প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া একটি বিবৃতি দিয়ে জানায়, সাংবাদিকদের কাজ কেবল মন্ত্রীদের বক্তব্য প্রচার করা নয়, সাধারণ মানুষকে প্ল্যাটফর্ম দেওয়াও তাঁদের দায়িত্ব। নাগাল্যান্ডের ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রীকে সাংবাদিকদের কাজে হস্তক্ষেপ না করার কড়া সতর্কবার্তা দেয় সংস্থাটি। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, “এ ধরনের আচরণ সাংবাদিককে পেশাগত দায়িত্ব থেকে বিরত করে, যা সরাসরি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ভারতের সংবিধানের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।”
ওয়াই. প্যাটন নাগাল্যান্ডের ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র ও সীমান্ত বিষয়ক দপ্তরের দায়িত্বেও আছেন। একসময় কংগ্রেসে থাকা প্যাটন বর্তমানে রাজ্যের অন্যতম প্রভাবশালী বিজেপি নেতা। তাঁর হুমকি এবং পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকের ওপর গুলির ঘটনায় নাগা সমাজ ও সংবাদমহলে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় আবারও সামনে এল উত্তর-পূর্ব ভারতে সাংবাদিকদের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার ছায়ায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সংকট।