‘ট্রাম্পের শুল্কবাণের জেরে বাণিজ্যচ্যুক্তি থেকে সরে এসেছে নয়াদিল্লি’, মন্তব্য প্রাক্তন ভারতীয় কূটনীতিবিদের
প্রতিদিন | ৩১ আগস্ট ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতকে শাস্তি দিচ্ছেন। তাঁর শুল্কবাণের জেরেই ভারত আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি থেকে সরে এসেছে। সর্বভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে এমনটাই বললেন প্রাক্তন অর্থ সচিব সুভাষ গর্গ।
সম্প্রতি ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, ভারত রাশিয়া থেকে কম দামে তেল কিনে, তা থেকে মুনাফা অর্জন করছে। ট্রাম্পের এই অভিযোগের কোনও অর্থনৈতিক বাস্তবতা নেই।” মার্কিন প্রেসিডেন্টের এহেন মন্তব্যকে তিনি ‘রাজনৈতিক নাটক’ বলেও অভিহিত করেছেন। একইসঙ্গে সুভাষ বলেন, “ট্রাম্পের এই আকাশ কুসুম দাবিকে ইতিমধ্যেই নস্যাৎ করেছে সিএলএসএ রিপোর্ট। রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কিনে ভারতের সাশ্রয়ের পরিমাণ মাত্র ২.৫ বিলিয়ান মার্কিন ডলার। ২৫ বিলিয়ান মার্কিন ডলার নয়। ট্রাম্প ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতকে শাস্তি দিচ্ছেন।” তিনি আরও বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট যদি এটিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে চান, তাহলে তিনি যে কোনও সংখ্যা বসিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু সত্যিটা হল, ভারত সবদিক খতিয়ে দেখে আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন না করে রাশিয় থেকে তেল কিনছে।” এরপরই ট্রাম্পকে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতের উপর শুল্কবোঝা চাপিয়েছে। তাঁর এই সিদ্ধান্তের জন্যই ভারত আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচ্যুক্তি থেকে সরে এসেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কখনই দরজা বন্ধ করা উচিত নয়। একপক্ষকে সর্বদা আশাবাদী হওয়া দরকার।” উল্লেখ্য, ভারত-মার্কিন বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলেছে। কিন্তু এখনও একমত হয়ে চুক্তি সই করতে পারেনি দু’পক্ষ। বিশ্লেষকদের মতে, সেদেশের কর্পোরেট সংস্থাগুলির চাপে কৃষিপণ্য, মৎস্য এবং ডেয়ারি পণ্যের ভারতীয় বাজার উন্মুক্ত করতে চায় আমেরিকা। সেই শর্তে রাজি নয় ভারত। তার ফলেই আটকে রয়েছে দু’দেশের বাণিজ্যচুক্তি।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার থেকে ভারতে কার্যকর হয়েছে মার্কিন শুল্কনীতি। যার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে দেশীয় বাজারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের পোশাক উৎপাদন ক্ষেত্রগুলি। জানা যাচ্ছে, শুল্ককোপে দেশের একাধিক বড় শহরে বস্ত্র উৎপাদন কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের সভাপতি এসসি রালহান বলেন, “বিপুল পরিমাণ এই শুল্ক চাপানোর জেরে তিরুপুর, নয়ডা, সুরাটের বস্ত্র উৎপাদন সংস্থাগুলি তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ, অধিক শুল্কের জেরে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশের মতো প্রতিযোগীদের তুলনায় অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছে তারা। বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা করছে মূল্যবান পাথর, গয়না, চিংড়ি, কার্পেট ও অন্যান্য আসবাবপত্র প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিও। ‘ট্রেড থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ’-এর অনুমান, ২০২৫-২৬ সালে আমেরিকায় ভারতের পণ্য রফতানি প্রায় ৪৩ শতাংশ কমে ৮৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪৯.৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াতে পারে।