মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে ছাত্রীর মৃত্যুতে ময়নাতদন্তের ফুটেজ সংগ্রহের নির্দেশ
হিন্দুস্তান টাইমস | ৩১ আগস্ট ২০২৫
আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় সারা রাজ্যে আলোড়ন পড়লেও, তার বছরখানেক আগেই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে এক ছাত্রীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছিল। অভিযোগ, সহপাঠীদের হাতে শারীরিক লাঞ্ছনা, সেই ঘটনার ভিডিয়ো তুলে ব্ল্যাকমেল এবং শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত বর্ষের ওই ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। প্রায় দু’বছর পরে ফের সেই মৃত্যুকে ঘিরে প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট।
শুক্রবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, ময়নাতদন্ত চলাকালীন কারা উপস্থিত ছিলেন তা চিহ্নিত করার জন্য সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখতে হবে। উপস্থিতদের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করার কথাও বলা হয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, আপাতত তদন্তকারী সংস্থা নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে সে দিকেও নজর দেওয়া হবে।
২০২৩ সালের ৩০ জুন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ওই ছাত্রী বহরমপুর শহরে দাদু-দিদিমার বাড়িতে গিয়ে গভীর রাতে ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে স্থানীয় থানার রিপোর্টে উল্লেখ ছিল। কিন্তু পরদিনই পাঞ্জাব পুলিশের কর্মরত বাবা-মা অভিযোগ করেন, মেয়েকে শারীরিক হেনস্থা করা হয়েছিল, সেই ঘটনার ছবি ও ভিডিয়ো তুলে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছিল। তাঁদের দাবি, চাপ সহ্য করতে না পেরে মেয়ে শেষ পর্যন্ত প্রাণ দিয়েছে।
পরিবারের অভিযোগ, থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়ার পরও পুলিশ তদন্তে কোনও উদ্যোগ নেয়নি। কারও ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়নি, এমনকি ঘটনার আগের রাতে মেয়ের সঙ্গে যাঁরা কনফারেন্স কলে কথা বলেছিলেন, তাঁদের কাউকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। ওই সময় ছাত্রীটির ফোনে দশটি মিসড্ কল ধরা পড়ে, কিন্তু সে সূত্রেও পুলিশ কাউকে তলব করেনি। পরিবারের দাবি, তাঁদের সন্দেহভাজন কয়েকজনের ভূমিকা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে পুলিশ। এই প্রেক্ষিতেই পরিবার হাইকোর্টে মামলা করে। প্রথমে বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের বেঞ্চে শুনানি হয়। পরে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ফের কল্যাণী এইমস-এ পাঠানো হয়। সেই ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির কাছ থেকে হলফনামা তলব করা হয়। এ বার বিষয়টি ডিভিশন বেঞ্চে পৌঁছয়।
পরিবারের আইনজীবী আদালতে জানান, গোপন জবানবন্দিতে বাবা-মা স্পষ্ট করে বলেছেন, মেয়েকে লাঞ্ছনার ছবি তোলে এক ব্যক্তি এবং তাঁকেই দায়ী করেছেন তাঁরা। অথচ পুলিশ সেই ব্যক্তিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানায়, গোপন জবানবন্দির অভিযোগগুলিকে গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত এগোতে হবে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে তাঁদের জেরা অপরিহার্য। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ময়নাতদন্তের সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ ও উপস্থিতদের তালিকা সংগ্রহ করতে হবে।