• চিনে জিংপিংয়ের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা! গালওয়ান শহীদদের ভুলে গিয়ে মাথা নত করলেন মোদি? জোর কটাক্ষ বিরোধীদের...
    আজকাল | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: দীর্ঘ সাত বছর পর চিনে পা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কোন দিকে এগোয় তা বুঝতে গোটা পৃথিবীর চোখ ছিল এই বৈঠকের দিকে৷ মুখোমুখি বৈঠকের শেষে দূরত্ব ভুলে কাছাকাছি আসার বার্তা দিলেন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। বৈঠক শেষে মোদি লেখেন, "এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে তিয়ানজিনে রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একটি ফলপ্রসূ বৈঠক হল। কাজানে আমাদের বৈঠকের পর থেকে ভারত-চীন সম্পর্কের ইতিবাচক দিক নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করেছি। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ব্যাপারে আমরা একমত। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পারস্পরিক স্বার্থরক্ষা এবং পারস্পরিক সংবেদনশীলতার উপর ভিত্তি করে সহযোগিতার প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"

    কার্যত একই সুরে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বন্ধুত্বের বার্তাই দিলেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তাঁর মতে, ড্রাগন ও হাতির একসঙ্গে পথচলাই উভয় দেশের জন্য শ্রেয়।

    বৈঠকে জিনপিং বলেন, "...চিন এবং ভারত প্রাচ্যের দু'টি প্রাচীন সভ্যতা। আমরা বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দু'টি দেশ এবং একইসঙ্গে 'গ্লোবাল সাউথ'-এরও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আমাদের দুই দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, উন্নয়নশীল দেশগুলির সংহতি এবং পুনরুজ্জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং মানব সমাজের প্রগতির ধারাকে নিশ্চিত করার ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা আমাদের উভয়ের কাঁধেই রয়েছে।"

    চিনা প্রেসিডেন্টের সংযোজন, "তাই উভয় দেশের জন্যই সঠিক পথ হল ভাল প্রতিবেশী হিসেবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা, একে অপরের সাফল্যের অংশীদার হওয়া এবং ড্রাগন ও হাতির একসঙ্গে পথচলা।"

    প্রধানমন্ত্রী মোদি মৈত্রীর বার্তা দিলেও বিষয়টি কি আদৌ দেশের জন্য উপযুক্ত? এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী প্রধানমন্ত্রীর পোস্টের নিচে কটাক্ষ করে লেখেন, "আমাদের লাদাখের দখল হয়ে যাওয়া জমির কী হল?"

    প্রসঙ্গত ২০২০ তে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ২০ জন ভারতীয় সেনার। এই ঘটনার পরই ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটে। কেন্দ্রের নির্দেশে ব্যান করে দেওয়া হয় টিকটক সহ বহু চিনা অ্যাপ। সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে কড়া বার্তা দেন রাজনাথ সিং। কিন্তু বিরোধীদের বরাবরই দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিছুতেই চিনের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননা৷ বিরোধীদের আক্রমণ সত্ত্বেও চিনা আগ্রাসন নিয়ে সেসময় কোনও মন্তব্য করেননি মোদি। 

    কিন্তু এই পাঁচ বছরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। একদা মোদির বন্ধু বলে পরিচিত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ করেই বিরাট পরিমাণ কর চাপিয়েছেন ভারতের উপর। এই অবস্থায় চিন এবং রাশিয়ার দিকে ঝোঁকা ছাড়া ভারতের হাতে তেমন কোনও কূটনৈতিক অস্ত্র অবশিষ্ট নেই বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। বিরোধীদের দাবি প্রধানমন্ত্রীর বিদেশনীতির ব্যর্থতার ফলেই এই সমস্যায় পড়তে হয়েছে দেশকে। চিনের সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত বাড়ানো মানে কার্যত ড্রাগনের সামনে নতি স্বীকার করা। আর তাতে অসম্মান করা হচ্ছে গালওয়ানে শহিদ হওয়া ভারতীয় সৈন্যদের। 

    প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের আগে চিনে SCO সংক্রান্ত একাধিক উচ্চপর্যায়ের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সফর করেছে। যার মধ্যে ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর।

     যদিও বিরোধীদের কটাক্ষে কান দিতে নারাজ বিজেপি। পদ্মশিবিরের দাবি ভারত চিনের মধ্যে ফের একবার ভাল সম্পর্ক তৈরি হয় তাহলে সেখান থেকে সবথেকে বেশি চাপে পড়ে যাবে পাকিস্তান। তারা চিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। তবে এবার যদি ভারত চিনের মধ্যে সম্পর্ক উন্নতি হয় তাহলে সেখান থেকে পাকিস্তানের রাতের ঘুম উড়বে সেটা বলাই বাহুল্য।
  • Link to this news (আজকাল)