দেশের মুখে খাবার তুলে দেন, সেই কৃষককেই থাপ্পড় নির্মম পুলিশের, রাগে কাঁপছে নেটপাড়া ...
আজকাল | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: তেলেঙ্গানার নারায়ণপেট জেলার তিলেরু-তে সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিবাদের সৃষ্টি করেছে। শনিবার প্রাইমারি এগ্রিকালচারাল কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে (PACS) ইউরিয়ার জোগান নিয়ে হট্টগোল শুরু হলে এক কৃষককে পুলিশ কর্মকর্তার থাপ্পড় মারার ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল থেকেই বিশাল সংখ্যক কৃষক ইউরিয়া সংগ্রহের আশায় সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। তবে সরবরাহ কম থাকায় এবং চাহিদা অত্যধিক হওয়ায় পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কৃষকরা পুলিশের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করলেও, উত্তেজিত ভিড়কে শান্ত রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
এই অবস্থায়, এক সাব-ইন্সপেক্টর কৃষক সত্যনারায়ণ রেড্ডির (গ্রাম: রাকোলু) সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। এমনকী তাঁকে প্রকাশ্যে থাপ্পড় মারেন। এই ঘটনা মুহূর্তে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এবং কৃষকদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি করে। তাঁরা পুলিশ ও কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন, দাবি করেন অপ্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ ও সার-সংকটের জন্য প্রশাসন দায়ী।
পুলিশ এই ঘটনাকে ‘অজান্তে’ বা ‘আকস্মিক’ বলে ব্যাখ্যা করলেও কৃষকদের ক্ষোভ কমেনি। বরং এটি সামগ্রিকভাবে কৃষকদের প্রতি সরকারের উদাসীন মনোভাবের প্রমাণ হিসেবে দেখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এই ঘটনার আগে নির্মল জেলায় এক প্রবীণ কৃষককে এক পুলিশ অফিসার রাজস্ব বৈঠকে হেনস্থা করলে সেই অফিসারকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। অপরদিকে, যোগুলাম্বা গাদওয়াল জেলায় একাধিক কৃষককে হাতকড়া পরানো নিয়েও তীব্র সমালোচনা হয়েছিল, এবং সেই ঘটনায় তেলেঙ্গানা ফারমার্স কমিশন কড়া নিন্দা জানিয়েছিল।
তেলেঙ্গানায় ইউরিয়ার ঘাটতি এখন একটি রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ভারত রাষ্ট্র সমিতি (BRS) ‘ইউরিয়া প্রতিবাদ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গান পার্কে খালি সার বস্তা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। তারা রাজ্যজুড়ে সার-সংকটের বিষয়টি তুলে ধরে কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় আক্রমণ শানায়।
BRS-র কার্যকরী সভাপতি কে টি রামা রাও (KTR) কংগ্রেস সরকারের সমালোচনায় বলেন, কৃষকদের সার পাওয়ার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। একইসঙ্গে, দলীয় বিধায়কেরা কৃষি কমিশনারের কার্যালয়ে ধর্নায় বসেন। পাশাপাশি অবিলম্বে ইউরিয়া সরবরাহের দাবি জানান।
এই প্রতিবাদের জেরে পুলিশ BRS নেতাদের গ্রেপ্তার করে, যা প্রশাসনের বিরুদ্ধে 'স্বৈরাচারী মনোভাব' এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কণ্ঠরোধ করার অভিযোগ এনে দেয়। BRS জানিয়েছে, তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবে এবং কংগ্রেস সরকারকে ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থ’ এবং ‘জনতার প্রতি বিশ্বাসঘাতক’ বলে অভিহিত করেছে।
এই পরিস্থিতিতে, তেলেঙ্গানা বিজেপি বিধায়ক পৈড়ি রাকেশ রেড্ডি কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া ইউরিয়া কৃষকদের না দিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।
সার সংকটকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ, রাজনৈতিক চাপ, এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কৃষকদের প্রতি এমন আচরণ ও সংকট সমাধানে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থাকে মারাত্মকভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে।