পাটনায় INDIA জোটের ভোটাধিকার যাত্রায় প্রমাদ গুনছে বিজেপি
আজকাল | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক আবহকে উত্তপ্ত করে তুলল INDIA জোটের ‘ভোটাধিকার যাত্রা’। রবিবার এই দীর্ঘ সফরের সমাপ্তি ঘটল পাটনায় এক পদযাত্রার মাধ্যমে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, আরজেডি’র তেজস্বী যাদব, সিপিআই(এমএল) নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এবং বিকাশশীল ইন্সান পার্টির মুখেশ সাহানি একসঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেন, যা বিরোধী ঐক্যের স্পষ্ট বার্তা বহন করছে।
১৭ আগস্ট সাসারাম থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রা প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার পথ এবং ১১০টিরও বেশি বিধানসভা কেন্দ্র অতিক্রম করেছে। পথে পথে নেতারা খোলা জিপে সফর করে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, মিছিল ও জনসভা করেন এবং শ্লোগান ওঠে— “ভোট চোর, গদ্দি ছোড়”। অন্তত ২৫টি জেলায় জনসভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিরোধী নেতারা অভিযোগ করেন যে, স্পেশাল ইন্টেন্সিভ রিভিশন (SIR) প্রক্রিয়ায় ভোট চুরির চেষ্টা করছে বিজেপি।
আরাহতে জনসভায় রাহুল গান্ধী যাত্রাকে এক “বিপ্লব” হিসেবে বর্ণনা করেন। তাঁর দাবি, “আপনার ভোট যদি চুরি হয়, তবে আপনার ভবিষ্যৎও লুট হয়ে যাবে।” তিনি বারবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি-আরএসএসকে আক্রমণ করেন, অভিযোগ করেন তাঁরা শুধুমাত্র ধনী এলিটদের স্বার্থ রক্ষা করেন। রাহুল গান্ধী ভোটাধিকারকে সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে যুক্ত করে বলেন— মহাত্মা গান্ধী ও বাবাসাহেব আম্বেদকরের স্বপ্নের ভারতকে বাঁচাতে হলে ভোটাধিকার অক্ষুণ্ণ রাখা জরুরি। এই সফরে রাহুল গান্ধী নিজেকে বারবার সাধারণ মানুষের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। সাদা টি-শার্ট, কার্গো প্যান্ট ও কাঁধে বিহারের ঐতিহ্যবাহী ‘গামছা’ পরে জনতার সামনে হাজির হয়েছেন তিনি। ফলে গ্রামীণ বিহারের মানুষের কাছে তাঁর বার্তা আরও গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে।
কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক কে.সি. ভেনুগোপাল এই যাত্রাকে “বিহারের গণআন্দোলনের ঐতিহাসিক মাইলফলক” আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর দাবি, এই যাত্রা জনগণের মধ্যে নজিরবিহীন সমর্থন পেয়েছে এবং ভোটাধিকার রক্ষার সংগ্রামে আশা জাগিয়েছে। এছাড়া তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব ও কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী— অনেকেই যাত্রায় অংশ নিয়ে বিরোধী ঐক্যের ছবি স্পষ্ট করেছেন।
যাত্রা বিতর্ক এড়াতে পারেনি। দারভাঙ্গায় এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে উদ্দেশ্য করে অশালীন শব্দ ব্যবহারের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় বিজেপি প্রবল প্রতিবাদ জানায়। এর জেরে পাটনায় কংগ্রেসের সদর দপ্তর সদাকত আশ্রমে বিজেপি-কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষও ঘটে। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি পরিকল্পিতভাবে তাদের কার্যালয়ে আক্রমণ চালিয়েছে।
বিহারের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই যাত্রার তাৎপর্য বিরাট। দীর্ঘ সফরে বিরোধী নেতারা সরাসরি ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং বিজেপিকে একাধিকবার কাঠগড়ায় তুলেছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই যাত্রা INDIA জোটের নির্বাচনী লড়াইয়ে শক্তি যোগাবে এবং বিহারের মাটিতে বিজেপি-বিরোধী সমীকরণ আরও স্পষ্ট করবে। ভোটাধিকার যাত্রা শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক প্রচার নয়, বরং আসন্ন নির্বাচনের আগে বিহারের রাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্রে বিরোধী ঐক্যের প্রদর্শন।