• গান্ধী ময়দান থেকে আম্বেদকর পার্ক যাত্রায় বিরোধী নেতারা! ‘‌ভোট চুরি’‌ ইস্যুতে কাল সুর চড়াবেন রাহুল-তেজস্বীরা...
    আজকাল | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আবু হায়াত বিশ্বাস: পাটনার গান্ধী ময়দান। বহু ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সভার সাক্ষী। বিহারে পালা বদলের সাক্ষীও এই ময়দান। ভোটার অধিকার যাত্রার সমাপ্তি অনুষ্ঠান এই ময়দান থেকেই হচ্ছে। সমস্ত প্রস্তুতি একেবারে শেষ পর্যায়ে। মাঠ জুড়ে তৈরি হয়েছে বিশালাকার প্যান্ডেল। পাটনা জুড়ে ছেয়ে গিয়েছে রাহুল, তেজস্বী, প্রিয়াঙ্কা গন্ধীদের কাট আউট। জয়প্রকাশ নারায়ণ বিমান বন্দর থেকে বেরোতেই রাস্তার চারপাশে নজর পড়ছে বড় হোডিং। যেদিকে নজর যায়, ভোটাধিকার যাত্রার ছবি দেওয়া ফ্লেক্স। কাল, বিরোধী নেতাদের উপস্থিতিতে এই গান্ধী ময়দান থেকেই যাত্রা শুরু হবে বি আর আম্বেদকর পার্কের দিকে। সেখান থেকে বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনকে বার্তা দেবেন রাহুল গান্ধী, তেজস্বী যাদবরা। গত ১৬ দিনে ভোটার অধিকার যাত্রায় বিপুল সমর্থন পেয়েছেন রাহুল গান্ধী। সাসারাম থেকে শুরু হয়ে এই যাত্রা পৌঁছে গেছে বিহারের পাটনায়। ভোট চুরির যে অভিযোগ, বিহারের প্রতিটি গা-‌গঞ্জে পৌঁছে দিতে পেরেছেন রাহুল - তেজস্বী। তাদের দাবি, বিহারের জনগণ বিজেপি - কমিশনের ষড়যন্ত্র রুখে দেবে। বিহারে এবার পালা বদল কেবল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। তেজস্বী যাদব বলছেন, বিহারে ভোটাধিকার যাত্রায় ভয় পেয়েছে বিজেপি। যাত্রায় বিপুল জনসমর্থনে এনডিএ নেতারা অস্থির হয়ে পড়েছেন। 

    সোমবার শেষ হচ্ছে ১৩০০ কিলোমিটার যাত্রা। তার আগে শনিবার বিহারে রাহুল গান্ধী-‌তেজস্বী যাদবদের যাত্রায় যোগ দেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদব। তিন নেতাকে হুড খোলা জিপে দেখা যায়। বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করেন অখিলেশ, তেজস্বী, রাহুল। বিজেপির সঙ্গে কমিশনের যোগসাজশের অভিযোগ তোলেন সপা প্রধান। দাবি করেন,‘‌কমিশনের নিরপেক্ষ থাকা উচিত। আমরা ভেবেছিলাম কমিশন নাগরিকের ভোটাধিকার রক্ষা করবে, সংবিধান রক্ষা করবে, কিন্তু কমিশন যেভাবে বিজেপির হয়ে কাজ করছে, তাতে মনে হচ্ছে এটি নির্বাচন কমিশন নয়, বরং বিজেপির ‘‌জুগাড় কমিশন’‌-এ পরিণত করেছে।’‌ আগামী দিনে বিহারে এনডিএ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হবে দাবি করে সপা প্রধান বলেছেন, বিহারে তেজস্বী সরকার হবে, বেকার যুবদের পলায়ন বন্ধ হবে। রাজ্যে বিজেপির পলায়ন হবে। অখিলেশের অভিযোগ, বিজেপির উদ্দেশ্য হচ্ছে পিডিএ-‌এর অধিকার কেড়ে নেওয়া এবং তাদের ভোট লুঠ করা। ওই উদ্দেশ্য সফল হতে দেবেন না তারা। সপা প্রধানের এক্স পোস্ট,‘‌ভাজপা কা হার, লিখেগা বিহার।’‌

    ভোটার অধিকার যাত্রায় রাহুল গান্ধী ও তেজস্বী যাদবদের সঙ্গে হাজার হাজার জনতা পথে নেমেছেন। যে পথ ধরে যাত্রা গিয়েছে, চারদিকে কেবল লোকে লোকারণ্য। ভিড়ের বহর বিজেপির ঘুম কেড়ে নিয়েছে। কখনও হাঁটছেন, কখনও গাড়িতে আবার কখনও মোটর বাইকে চেপে রাহুল-‌তেজস্বী যাত্রা করছেন। যা বিহারের যুবদের মন জয় করে নিয়েছে। বিহারে এই যাত্রা হলেও এর প্রভাব কিন্তু গোটা দেশেই পড়ছে বলে দাবি বিরোধী নেতাদের। গত কিছুদিন ধরে বিহারের অলি গলিতে স্লোগান উঠছে ‘‌ভোট চোর, গদ্দি ছোড়’। ক্রমেই তা দেশের প্রতিটি কোনে পৌঁছে গিয়েছে। বলা ভাল, এই স্লোগান ও ন্যারেটিভ একেবারে বুথ স্তরে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন বিরোধী শিবিরের নেতারা। রাহুলের প্রচেষ্টায় গোটা বিহার জুড়ে গণ আন্দোলনে পরিণত হয়েছে এসআইআর ইস্যুটি। সামাজিক মাধ্যমে ট্রেন্ডিং এই যাত্রা। এক্স, ইনস্টাগ্রাম, থ্রেডস, ফেসবুক রাহুলময়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা স্বীকার করছেন, রাহুল-‌তেজস্বীদের এই যাত্রা বিহারের ভোটে অনেকটাই এগিয়ে দিল। এসআইআর ও ভোট চুরি ইস্যিতে তেজস্বী যাদবও নির্বাচন কমিশনকে একহাত নিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‌নির্বাচন কমিশন এখন আর নিরপেক্ষ নয়, বিজেপির শাখা সংগঠনে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্র, সংবিধান এবং মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই আমরা এই যাত্রা করছি। গ্রামীণ স্তরেও আমরা ঘুরেছি এবং দেখেছি, নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের বিশ্বাস শেষ হয়ে গেছে।’‌

    দেশের ইতিহাসে যতগুলি যাত্রা হয়েছে, তার প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা গিয়েছে পরবর্তী সময়ে। ইতিহাস সাক্ষী,পদযাত্রার মাধ্যমে জনসংযোগ বাড়ে। রাহুল গান্ধী এখন সেই কাজটাই করছেন। কখনও কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ভারত জোড়ো যাত্রা কিংবা মণিপুর থেকে মহারাষ্ট্রে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা করেছেন। তাঁর যাত্রার মাধ্যমে ঘৃণা-‌বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ভালবাসার বার্তা দিতে পেরেছেন। এসআইআর ও ‘‌ভোট চুরি’‌ ইস্যুকে সামনে রেখে এবার পথে নেমেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস নেতারা দাবি করছেন,‘‌ভোট চুরির বিরুদ্ধে ‘‌ভোটার অধিকার যাত্রা’‌ একটি ঐতিহাসিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে, যা কেবল বিহার নয়, গোটা দেশের মানুষকে আকৃষ্ট করছে।’‌ যাত্রা শুরুর দিনেই রাহুল জানিয়েছিলেন, এটি শুধু একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটি গণতন্ত্র এবং সংবিধান রক্ষার আন্দোলন। ‌

    কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার পাটনায় গান্ধী ময়দান থেকে বড় জমায়েত হবে। সকাল ১১ টা ১০ মিনিটে সেখান থেকে বিআর আম্বেদকর পার্কে শেষ হবে এই ভোটাধিকার যাত্রা। বিরোধী নেতারা ভাষণ দেবেন। ১৩০০ কিলোমিটার যাত্রায় আগাগোড়া রাহুলের সঙ্গে তেজস্বী যাদব অংশ নিয়েছেন। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, রেবন্ত রেড্ডি, সিদ্দারামাইয়া, সুখবীর সিং সুখু, শচীন পাইলটরা যোগ দেন। এছাড়া সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি যোগ দিয়েছেন। ১ সেপ্টেম্বেরর কর্মসূচিতে তৃণমূলের তরফে সাংসদ ইউসুফ পাঠান এবং দলের নেতা ললিতেশ ত্রিপাঠী যোগ দেবেন বলে জানা গিয়েছে। চলতি বছরের নভেম্বরে বিহারে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। তার আগে ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে পথে নেমেছেন রাহুল-তেজস্বী। সিপিআইএমএল (লিবারেশন), বিকাশশীল ইনসান পার্টি (ভিআইপি)-র মতো মহাগঠবন্ধনের সহযোগীরাও তাতে যোগ দিয়েছেন।
  • Link to this news (আজকাল)