• পড়াশোনা হ্যারিকেনের আলোয়, ফি দিতে না পারায় পরীক্ষা দিতে দেয়নি স্কুল! কোন্নগরের সেই ছেলে এখন নাসার বিজ্ঞানী, পাচ্ছেন ‘ধ্রুবতারা’ সম্মান
    আনন্দবাজার | ৩১ আগস্ট ২০২৫
  • স্বপ্ন ছিল, মহাকাশ-গবেষণা। ছেলেবেলায় অনটনেও স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি। নাছোড় মনোভাব ১৯৯৯-তে তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-য়। হুগলির কোন্নগরের সেই গৌতম চট্টোপাধ্যায় এ বার নাসা-র ‘ধ্রুবতারা’ (নর্থ স্টার) সম্মান পেতে চলেছেন।

    নাসার ‘জেট প্রোপালশান ল্যাবরেটরি’র (জেপিএল) ওই সম্মান দেওয়া হয় চারটি বিভাগে। তার মধ্যে প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং পরবর্তী প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য গৌতম মনোনীত হয়েছেন। তিনি এখন নাসা-র ‘সিনিয়র’ বিজ্ঞানী। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে তাঁকে পুরস্কৃত করা হবে। এর আগে, ২০২৩-এ ‘নাসা-জেপিএল পিপল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ এবং ওই বছরেই‘আর্মস্ট্রং’ পুরস্কারও পেয়েছেন বছর ষাটের এই বঙ্গসন্তান।

    গৌতম ওয়টস্যাপে জানান, গবেষণার পাশাপাশি, পরবর্তী প্রজন্মের বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের তত্ত্বাবধান এবং তাঁদের উদ্বুদ্ধ করা তাঁর কাছে নেশার মতো। তাঁদের কৌতূহল, উৎসাহ, বাধা অতিক্রমের উদ্যম তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। বলেন, ‘‘পুরস্কারপ্রাপ্তি কাজের ক্ষেত্রে নতুন করে উদ্বুদ্ধ করে। অণুতরঙ্গ (মাইক্রোওয়েভ) বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির অগ্রগতি নিয়ে কাজে এই সম্মান আমাদের দলবদ্ধ প্রয়াস।’’

    বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে এসেছিলেন গৌতমের ঠাকুরদা-ঠাকুমা। কোন্নগর স্টেশনের কাছে, নবগ্রামে অ্যাসবেস্টসের চাল দেওয়া মাটির ঘরে পাঁচ ভাইবোনের সঙ্গে বড় হওয়া। বাবা সুনীলরঞ্জন ছিলেন স্বল্প বেতনের সরকারি কর্মী। স্কুলে ফি দিতে না পারায় তৃতীয় শ্রেণিতে পরীক্ষা না দিয়ে ফিরতে হয়েছিল গৌতমকে। মায়ের অনুনয়ে বাকি পরীক্ষা দিতে পারেন। বিদ্যুৎ না থাকায় নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হ্যারিকেনের আলোয়।

    শিবপুর বিই কলেজে ইলেকট্রনিক্স নিয়ে পড়াশোনা সেরে, টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চে (টিআইএফআর) যোগ ‘জায়ান্ট মেট্রোওয়েভ রেডিয়ো টেলিস্কোপ’ তৈরিতে। উচ্চশিক্ষায় পাড়ি আমেরিকায়। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (ক্যালটেক) থেকে পিএইচ ডি করার পরে, কাজ শুরু নাসায়। জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা নিয়ে কাজ করছেন। স্টিফেন হকিংয়ের পাশে বসে কাজ করেছেন। ক্যালটেকে ‘ভি‌জ়িটিং প্রফেসর’ হিসাবে পড়ান।

    আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় পরিবেশবিজ্ঞানী স্ত্রী সুলেখাকে নিয়ে থাকেন গৌতম। মেয়ে অনুরিমা গবেষণা করছেন ওয়াশিংটনে। গৌতমের বাবা মারা গিয়েছেন। মা সাধনা চট্টোপাধ্যায় থাকেন কোন্নগরের এক আবাসনে। বোন ডলি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মা অসুস্থ। দু’বেলা ভিডিয়ো-কলে মায়ের সঙ্গে কথা বলে দাদা। এত উঁচুতে পৌঁছেও দাদা একই রকম আছে।’’সহমত নবম-দশম শ্রেণিতে নবগ্রাম বিদ্যাপীঠে গৌতমকে ছাত্র হিসাবে পাওয়া সব্যসাচী কোনার। অবসরপ্রাপ্ত জীবন বিজ্ঞান শিক্ষকের কথায়, ‘‘ওর বিশেষ গুণ, এখনও খুবই সাধারণ ভাবে চলাফেরা করে। প্রাক্তনী সংগঠনের অনুষ্ঠানে স্কুলে এলে, সকলের সঙ্গে মেশে। ওর চোখ আকাশে, পা মাটিতেই।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)