শুটিং শেষ হতেই ঋতুদার হাউহাউ কান্না, মেয়েটা চলে গেল রে কৌশিক! ঋতুপর্ণর জন্মদিনে অতীতচারণ
আনন্দবাজার | ৩১ আগস্ট ২০২৫
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়
তখন ইন্দিরা প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হচ্ছিল এসভিএফ প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে আমার প্রথম ছবি ‘জ্যাকপট’। ওই ছবি দেখতে ঋতুপর্ণ ঘোষ ইন্দিরায় এসেছেন। বেরিয়ে আমায় বললেন, “ভালই হয়েছে। কালকে আমার সঙ্গে দেখা করিস।” যাঁরা ঋতুপর্ণ ঘোষকে কম চেনেন বা জানেন তাঁদের পক্ষে এটুকু কথা শুনে ওঁকে বুঝে ফেলা খুব কঠিন। কারণ, ঋতুদাকে বোঝা খুবই শক্ত। অনেক সময় এমনও বলতেন, “বিচ্ছিরি হয়েছে!” আদতে খুব ভাল লেগেছে বলে ওঁর ওই কথা। যেমন আমার ছবি ‘শব্দ’ দেখে বলেছিলেন, “আমার দেখা হয়নি!”
যাই হোক, ঋতুদার সঙ্গে পরের দিন দেখা করতে গিয়েছিলাম। ছবি নিয়ে কিছু কথা হল। তার পর আমার ‘আর একটি প্রেমের গল্প’তে ঋতুপর্ণ ঘোষ।
ফ্লোরে দাদা ঢুকলেই আমরা তটস্থ। একে বকছেন তাকে শাসন করছেন— সে এক হুলস্থূল ব্যাপার। অরোরা স্টুডিয়োয় শুটিং। নিজে ‘চরিত্র’ হয়ে উঠতেন নিমেষে। বাকিদের থেকেও সেটাই চাইতেন। এ ভাবে গোটা শুটিং চলেছিল। নিজের সাজ, পোশাক নিয়ে দারুণ খুঁতখুঁতে। পান থেকে চুন খসলেই মুখ ভার।
ছবির শেষ দিনের শুটিং। ঋতুদার সে দিন নারীর সাজ। এমনিতেই পরিপাটি সাজতে ভালবাসতেন। চিত্রনাট্য অনুযায়ী তিনি ‘চপল রানি’ হবেন। খুব যত্ন নিয়ে, অনেক ক্ষণ ধরে সেজেছিলেন দাদা। সাজ শেষ হতে মেকআপ রুমে গিয়ে আমি স্তব্ধ। চোখের পলক ফেলতে পারছি না। কী যে সুন্দর দেখাচ্ছে! আমার মুগ্ধতা দেখে মৃদু হাসি ওঁর মুখে। জানতে চাইলেন, “কী রে, আমায় রেখার মতো দেখাচ্ছে?” কোনওমতে ঘাড় নেড়েছিলাম সে দিন।
শুটিং শেষ হতে আর এক চিত্র। হারেম প্যান্ট আর টি শার্ট পরে ঋতুদা রূপটান তুলছেন। চোখের কাজল সারা মুখে ঘেঁটে গিয়েছে। কিছুতেই উঠছে না। তার মধ্যেই হাপুস নয়নে কাঁদছেন। আমি ঢুকতেই ডুকরে উঠলেন, “মেয়েটা চলে গেল রে কৌশিক।” সে কী বুকভাঙা হাহাকার! নিজেকে বড্ড অপরাধী লাগছিল। মনে হচ্ছিল, ‘মেয়েটার’ সঙ্গে আলাপ করে দিয়ে ঠিক করিনি। নিজের মধ্যে এই মেয়েটার খোঁজই তো করে গিয়েছেন আজীবন। বহু বছর অপেক্ষা করেছেন। অস্ত্রোপচার, ওষুধ— কিচ্ছু বাকি রাখেননি। ওঁর স্বপ্নের ‘মেয়ে’, সেই নারীসত্তাকে খুঁজতে গিয়েই বরাবরের জন্য হারিয়েই গেলেন ঋতুদা!