• একসময় মেয়ের বিয়ের জিনিসপত্র ভাসত জলাশয়ে! গ্রামের অনুষ্ঠানে আজও প্রথম নিমন্ত্রণ পায় লোটাদেবীর পুকুর
    বর্তমান | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: গ্রামের কারও বাড়িতে বিয়ে, অন্নপ্রাশন কিংবা অন্য কোনও অনুষ্ঠান হলে আজও প্রথম নিমন্ত্রণ পায় লোটাদেবীর পুকুর! এটিকে ‘পুণ্যিপুকুর’ বলে মনে করেন এলাকার বাসিন্দারা। জনশ্রুতি, একসময় নাকি গ্রামের কোনও দুঃস্থ পরিবার মেয়ের বিয়ের সামগ্রী জোগাড় করতে না পারলে এই পুকুরকে নিমন্ত্রণ করে বলে যেত। পরদিন সকালে এসে পরিবারের সদস্যরা দেখতেন, পুকুরের কাছে পিতলের কলসি, থালা, ঘটি-বাটি কিংবা অন্য যা কিছু চাওয়া হয়েছিল, সেসব জলে ভাসছে নতুবা সযত্নে পাড়ে রাখা রয়েছে। ওইসব সামগ্রী দিয়ে বিয়ে হতো মেয়ের। বাসিন্দাদের বিশ্বাস, ডাকাতদের লুট করে আনা সামগ্রী অলৌকিক ক্ষমতাবলে দেবী গ্রামের মানুষকে বিলিয়ে দিতেন। এর থেকেই জঙ্গলঘেরা পুকুরপাড়ে মা কালীর বিগ্রহের নাম হয় লোটাদেবী।

    জলপাইগুড়ির মোহিতনগর থেকে কিছুটা এগিয়ে চা বাগান, জঙ্গলঘেরা এলাকায় করলা নদীর তীরে অবস্থিত ওই মন্দির। কয়েকশো বছর পেরিয়ে এসে আজও ওই মন্দির চত্বরে থাকা পুকুর ঘিরে এলাকার মানুষের বিশ্বাস অটুট। ওই পুকুরে নাকি আজও স্নান সারেন লোটাদেবী! নিশুতি রাতে মন্দিরে তাঁর নুপূরের ধ্বনি শোনা যায়! জলে-জঙ্গলে জাগ্রত দেবী, এই বিশ্বাসে ভর করেই আজও এলাকায় কারও বাড়িতে কোনও অনুষ্ঠান হলে পান-সুপারি দিয়ে ওই পুকুরকে সবার আগে নিমন্ত্রণ করে যান বাসিন্দারা। তাঁদের বিশ্বাস, লোটাদেবীর আশীর্বাদ পেলে সবকিছু ভালোভাবে সম্পন্ন হবে।

    এক সময় জঙ্গল, চা বাগানের বিপদসঙ্কুল পথ ধরে পৌঁছতে হতো মন্দিরে। নতুবা পার হতে হতো নদী। এখন মন্দিরে যাওয়ার জন্য করলা নদীর উপর তৈরি হচ্ছে সেতু। মন্দিরের পাশাপাশি সংস্কার করা হয়েছে পুকুরটি। বাঁধানো হয়েছে মন্দির চত্বর। এতে ভক্ত-দর্শনার্থীর ভিড় বাড়বে বলে মনে করছেন এলাকার বাসিন্দারা।

    মন্দিরের পুরোহিত সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, আমি ৩৫ বছর ধরে লোটাদেবীর মন্দিরে পুজো করছি। বহুবার মন্দির চত্বরে চোখের সামনে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে দেখেছি। দেবীর উপস্থিতি টের পেয়েছি। তিনি বলেন, জলপাইগুড়ি তো বটেই, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন এখানে পুজো দিতে আসেন। ফেব্রুয়ারিতে বার্ষিক পুজোয় অসম থেকেও আসেন ভক্তরা। প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও চিরকূটে নিজের নাম-গোত্র লিখে পুজো দেওয়ার জন্য উপাচার পাঠিয়েছিলেন।

    জলপাইগুড়ির আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক উমেশ শর্মা বলেন, জনশ্রুতি কীভাবে তৈরি হয় তা বলা মুশকিল। তবে লোটাদেবীর মন্দির চত্বরে থাকা পুকুর ঘিরে আজও মিথ অটুট। ওই মন্দিরে যাওয়ার জন্য যদি রাস্তা বা সেতু তৈরি হয় তা ভালোই হবে। জেলার পর্যটন মানচিত্রেও অন্তর্ভুক্ত হবে ওই মন্দির।  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)