নেপালের ক্যাসিনোতে হাওয়ালার মাধ্যমে উত্তরের জুয়াড়িদের টাকা
বর্তমান | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: নেপালের একাধিক ক্যাসিনোতে উড়ছে শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের টাকা। মূলত শুক্র, শনি ও রবিবার নেপালের একাধিক ক্যাসিনোতে ভিড় করছে উত্তরবঙ্গের জুয়াড়িরা। হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা এপার থেকে নেপালে পৌঁছে যাচ্ছে। সেই টাকাতেই রাত রঙিন হচ্ছে নেপালে। মেচি সেতু পার করলেই কাঁকরভিটা সহ একাধিক জায়গায় গড়ে ওঠা ক্যাসিনোই বর্তমানে উত্তরবঙ্গের জুয়াড়িদের ডেস্টিনেশন হয়ে উঠেছে। শিলিগুড়ির বেশকিছু গোপন ডেরাতে টাকা জমা করে সেই টাকা নেপালে গিয়ে ওঠাচ্ছে জুয়াড়িরা। শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ থেকে শুরু করে মালদহ আবার কোচবিহারের জুয়াড়িরাও এতে গা ভাসিয়েছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়িতে টাকা জমা করার একাধিক ডেরা রয়েছে। সকালে এসে মোটা টাকা জমা দিয়ে ১০, ২০ টাকার ছেঁড়া নোট নিয়ে নেপালা চলে যাচ্ছে জুয়াড়িরা। নেপালের ধুলাবাড়ি, কাঁকরভিটা, ইলামের নির্দিষ্ট ডেরাতে গিয়ে ছেঁড়া নোট দেখালেই মিলছে পুরো টাকা। সেই টাকা নিয়েই ক্যাসিনোতে যাচ্ছে জুয়াড়িরা। যদিও পুলিসের দাবি, হাওয়ালার অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে বিভিন্ন সূত্র মারফত খবর পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিসের ডিসিপি রাকেশ সিং বলেন, আমাদের কাছে এধরনের কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে আমরা সবদিক খতিয়ে তদন্ত করছি।
পুলিস ও এসএসবি সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গ সহ একাধিক পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকেও কোটি কোটি টাকা রোজগার করছে নেপাল। কাঁকরভিটা, ধুলাবাড়ি, বিত্তা মোড়ের ক্যাসিনোয় ভারতীয়রা বেশি যাচ্ছে। যেহেতু ভারত-নেপালের মধ্যে পরিচয়পত্র নিয়ে যে কেউ যাতায়াত করতে পারে। নেপালের বাসিন্দাদের জন্য ক্যাসিনো নিষিদ্ধ। সেই কারণে ভারতীয়দের উপরই ক্যাসিনোগুলি নির্ভরশীল। শুক্র, শনি ও রবিবার সহ যেকোনও ছুটির দিনে ভারতীয়রা নেপালে গিয়ে প্রতি রাতে কোটি কোটি টাকার জুয়া খেলে। ক্যাসিনোতে জুয়ার পাশাপাশি মেলে খাবার, পানীয় থেকে সুন্দরী মেয়ে। ফলে হোটেল ব্যবসায়ীদের ব্যবসার রমরমা।
তবে এই আমোদপ্রমোদের জন্য যে লক্ষ লক্ষ টাকা দরকার তা ওপারে নিয়ে যাওয়ার পথে যদি প্রশাসনের নজরে পড়ে যায়? এই ভয়েই হাওয়ালা ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, পানিট্যাঙ্কির মেচি সীমান্ত হয়ে নেপালে যাতায়াতের সময় এসএসবি এবং নেপাল পুলিসের তল্লাশির মুখে পড়তে হয়। তাই বড় অঙ্কের নগদ টাকা নিয়ে ওপারে যাতায়াত করার সাহস পায় না জুয়াড়িরা।
পুলিসের একটি সূত্রে জানিয়েছে, ভক্তিনগর ও শিলিগুড়ি থানার একাধিক এলাকায় হাওয়ালার কাজ হচ্ছে। সেই অনুযায়ী পুলিসের একাধিক সোর্সকে সক্রিয় করা হয়েছে। কোথায় কারা এধরনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, তা জানতে একাধিক ব্যক্তিকেও ইতিমধ্যে জেরা করেছে পুলিস। যদিও সঠিক লিঙ্ক এখনও পায়নি তদন্তকারীরা। তবে তাঁদের দাবি, শুধুমাত্র শিলিগুড়ি নয়, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার জেলা থেকেও এই হাওয়ালার কারবার হতে পারে। সমস্তটাই তারা খতিয়ে দেখছে।